নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: নদীবেষ্টিত এলাকা পটুয়াখালী পৌরসভায় দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পৌর কর্তৃপক্ষের সঞ্চালন লাইনের পানির ওপর নির্ভরশীল হলেও জলবায়ু পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ও অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে দিন দিন তীব্র হচ্ছে পানির সংকট।
বর্তমানে পৌরসভার চারটি ওভারহেড ট্যাংক থেকে পানি সরবরাহ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাইয়ের পানিতে দুর্গন্ধ, শেওলা এমনকি লবণাক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে সংকট আরও তীব্র হয়। অনেক এলাকায় পাম্প থেকে প্রথম ৫-১০ মিনিটে অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি ওঠে, যা ব্যবহারের অযোগ্য। পানি সংগ্রহের স্থলও অনেক সময় থাকে অপরিচ্ছন্ন।
এ ছাড়া ধনী পরিবারগুলো নিজস্ব সাবমার্সিবল স্থাপন করে বিকল্প ব্যবস্থা করলেও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে। বিদ্যুৎ-বিভ্রাট বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। তখন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় পানি সরবরাহ। শহরের অনেক বাসিন্দা জানান, এই পানি সরাসরি পান করা যায় না। ফুটিয়ে বা ফিল্টার ব্যবহার করে পান করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
স্বনির্ভর রোডের বাসিন্দা গৃহিণী আনু বেগম বলেন, ‘সাবমার্সিবল বসিয়েছি, কিন্তু প্রথমে লবণাক্ত পানি ওঠে। কয়েক মিনিট পর খাবার উপযোগী পানি পাওয়া যায়। আর সাপ্লাইয়ের পানি অনেক সময় দুর্গন্ধযুক্ত ও ময়লা থাকে।’
রিকশাচালক ইব্রাহিম মিয়ার অভিযোগ, ‘পানি ঠিকমতো আসে না। বিশুদ্ধ পানি তো মেলেই না। কখনো সাপ্লাইয়ের পানি খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। হোটেলগুলো এই পানি ব্যবহার করে, কিন্তু তা নিরাপদ নয়।’
সমাজসেবক মোজাম্মেল নাসরিন এমা বলেন, ‘এখনই পরিকল্পিত ও টেকসই সমাধান না করলে ভবিষ্যতে পটুয়াখালী জনস্বাস্থ্য সংকটে পড়বে। আধুনিক পানি শোধন প্রযুক্তি, বিকল্প উৎস ও দীর্ঘমেয়াদি পানি ব্যবস্থাপনা জরুরি।’
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদ শামিম বলেন, দূষিত ও লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে শিশুদের মধ্যে চর্মরোগ ও ডায়রিয়া বেড়েছে। হাসপাতালে আসা অনেক শিশু অসুস্থ পানিজনিত সমস্যায়।
পটুয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক মো. জুয়েল রানা বলেন, গ্রাহকের তুলনায় পাম্পের সংখ্যা কম। প্রতি মাসে ওভারহেড ট্যাংক ও সঞ্চালন লাইন পরিষ্কার করা হয়। তবু কিছু এলাকায় সমস্যা রয়ে গেছে। নিরাপদে পান করতে হলে পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পটুয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একুইফারে লবণাক্ততা ঢুকে পড়ছে। পানিতে লিগনিন ও ট্যানিন থাকার ফলে কিছু সময় পর তা লালচে হয়, স্বাদ নষ্ট করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি করে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.