স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে চুরির অপবাদ দিয়ে মুন্না (১২) নামের এক কিশোরকে গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে তিনদিন ধরে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই কিশোরের আর কোন খোঁজ মিলছে না। নির্যাতনের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ জোরেশোরে তদন্তে নামে। তবে পুলিশও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ কিশোরের খোঁজ পায়নি।
অমানবিক নির্যাতনের শিকার কিশোর মুন্না গলাচিপা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া গ্রামের শাহজাহান কমান্ডারের ছেলে। ধারাবাহিক নির্যাতনের এ ঘটনাটি ঘটেছে ৯ মে সকাল থেকে ১১ মে মধ্যরাত পর্যন্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বোয়ালিয়া গ্রামের রাড়ি বাড়িরউঠোনে একটি গাছের সঙ্গে কিশোর মুন্নাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। হজরত আলী নামের এক ব্যক্তি কিশোরকে দফায় দফায় মারধর করছে। লাঠি দিয়ে তাকেবেধড়ক পেঠানো হচ্ছে। কিশোরটি মার খাচ্ছে আর চিৎকার করছে। বেধড়ক মারে কিশোরের শরীর ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।
মারধরের সময়ে বাড়ির লোকজন কিশোরটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। কেউ কেউ মোবাইলফোনে ছবি ও ভিডিও তুলছে। কিশোরটিকে চুরির সত্যতা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও ভিডিওতে দেখা গেছে। মুন্নার পরিবারের অভিযোগ গত ৯ থেকে ১১ মে মধ্যরাত পর্যন্ত দফায় দফায় মুন্নার ওপর এ অমনাবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তবে ১১ মে মধ্যরাতের পর থেকে আর কিশোরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের আরও অভিযোগ, মুন্নার বিরুদ্ধে রাড়ি বাড়ির একটি পরিবারের ৮৫ হাজার টাকা চুরির অভিযোগ এনে এমন নির্দয় ভাবে পেঠানো হয়েছে এবং তাকে নিখোঁজ করা হয়েছে।
মুন্নার আপন মা নেই। সৎ মা হাসিনা বেগম জানান, তারা ঢাকায় থাকেন। মুন্না বাড়িতে থাকতো। মুন্নার নির্যাতনের খবর পেয়ে তারা বাড়িতে এসেছেন। তার ছেলেকে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে শিকল দিয়ে তিনদিন ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে হজরত আলী, ফেরদৌস, মমতাজ এবং তানিয়া বেগমদফায় দফায় মারধর ও নির্যাতন করে। এরপর থেকে মুন্নার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে গলাচিপা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন টুটু জানান, তিনি এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। যে কারণে ঘটনাটি তিনি জানতে পারেন নি। তবে এ ঘটনার তদন্তসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।