স্টাফ রিপোর্টার : ‘শিক্ষা হলো জাতির অমলিন আলো’। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) সেই আলোকধারাকে সারাদেশের মতো বরিশাল অঞ্চলের নগর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিচ্ছে। উচ্চমানের, সময়োপযোগী ও জীবনমুখী শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন একটি সমাজ গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে শিক্ষার আলো থেকে কেউ বঞ্চিত থাকবে না।
‘সবার জন্য উন্মুক্ত, কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা’ — এই স্লোগানকে সামনে রেখে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বরিশাল অঞ্চলেও কর্মজীবী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া মানুষের জীবনে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। এ অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বাউবির বিভিন্ন কোর্সে অধ্যয়ন করছে বলে আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. আজিজুল হক জানিয়েছেন।
১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের পর গঠিত গণমুখী সরকারের আমলে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯২’ পাস হয়। এর ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দূরশিক্ষণ বা সবার জন্য উন্মুক্ত শিক্ষা কার্যক্রম’ শুরু হয়। বর্তমানে বাউবির ৬টি স্কুলের মাধ্যমে ৬৭টি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নগরীর রূপাতলীতে দুই একর জমির ওপর ইতোমধ্যে বাউবির নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের প্রায় দেড়শ স্টাডি সেন্টারের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক কর্মজীবী, শ্রমজীবী ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
গত পাঁচ বছরে বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের আওতাধীন ৪২টি উপজেলার লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ইতোমধ্যে এখানে ব্যাচেলর অব মাদ্রাসা এডুকেশন (BMEd) কোর্স চালু হয়েছে, যা দক্ষিণাঞ্চলের মাদ্রাসা শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি এমবিএ, এমএ ও এমএসএস প্রোগ্রামও বরিশাল স্টাডি সেন্টারে চালু রয়েছে।
বর্তমানে বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬ জেলার ৪২টি কেন্দ্রে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিএ/বিএসএস, বিএড, এমএড, বিএজিএড, এমবিএ, বিবিএ ও ডিসিএসএ কোর্সে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণ ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করছে। তাদের অধিকাংশই কর্মজীবী বা শ্রমজীবী, যারা নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন না। বাউবি তাদের জীবনে শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এছাড়া বরিশাল সেনানিবাসে কর্মরত সেনা সদস্যদের জন্য ‘এইচএসসি নিশ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় বিশেষ দূরশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্যও বাউবির বরিশাল কেন্দ্রের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দেশে দূরশিক্ষণ ব্যবস্থার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ২০০টি রেডিও সেট বিতরণের মাধ্যমে বেতারভিত্তিক দূরশিক্ষণের সূচনা হয়। ১৯৬২ সালে ‘অডিও-ভিজ্যুয়াল এডুকেশন সেন্টার’ গঠনের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম নতুন রূপ পায়। ১৯৭৮-৮০ সালের মধ্যে সরকার ‘স্কুল ব্রডকাস্টিং প্রোগ্রাম’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এই কেন্দ্রগুলোকে একীভূত করে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি (NIEMT)’ গঠন করা হয়, যা ১৯৮৫ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিস্ট্যান্স এডুকেশন (BIDE)’-এর সঙ্গে একীভূত হয়।
সরকারের অনুরোধে ১৯৮৯ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে একটি মিশন দেশে এসে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে দেশের দুই সহস্রাধিক স্টাডি সেন্টারে ১২টি আঞ্চলিক ও ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উন্মুক্ত ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। বাউবির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এখন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রির মতো উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগও পাচ্ছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.