নিজস্ব প্রতিবেদক : মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে এবারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গতবছরের চেয়ে জেলেদের বিরুদ্ধে যেমন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অসাধু জেলে কর্তৃক অভিযানিক দলের ওপর হামলার সংখ্যাও বেড়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে-গত ৩ অক্টোবর দিবাগত রাত থেকে সারাদেশের ন্যায় বরিশালের নদ-নদীতে ইলিশ শিকার, সংরক্ষণ ও পরিবহনে ২২দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা ২৫ অক্টোবর শেষ হয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল করতে এবারই প্রথমবারের মতো নদীতে ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা হয়েছে। তেমনি জল কামান ব্যবহার করা হয়েছে অসাধু ইলিশ শিকারিদের দমাতে। তবুও বিভিন্ন নদীতে দেখা মিলছে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার।
পাশাপাশি এবারের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে অতীত বছরের চেয়ে এবার সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বরিশালে জেলেদের সাথে অভিযানিক দলের অর্ধশত সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। মৎস্য বিভাগের দাবি, দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চলতি বছর নদী দাপিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে অসাধু জেলেরা। বরিশালে মাছ ধরার বিরুদ্ধে অভিযানে প্রায় অর্ধশত সংঘর্ষের মধ্যে ইলিশের হটস্পট মেঘনাতেই ঘটেছে ২০টি সংঘর্ষের ঘটনা। সিনেমার মতোই ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে জেলে আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত এসব সংঘর্ষে। জেলেদের অর্তকিত হামলা থেকে আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য একাধিকবার ফাঁকা গুলি করেও তাদের (জেলে) দমাতে পারেননি।
মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানিক দলের ওপর জেলেদের হামলার ঘটনায় হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার সদস্য ও জেলে মিলে কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহতের ঘটনা ঘটেছে। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, আমাদের টিম বারবার জেলেদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছে। জেলেরা যেকোন উপায়ে মারমুখীভাবে আচরণ করে ইলিশ ধরার চেষ্টা করেছে।
জেলেদের হামলায় আহত হয়েও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে বরিশালের বিভাগের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করা ইলিশের হটস্পট মেঘনা নদীর বরিশালের হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আলম জানিয়েছেন-গত ২২ দিনে মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত অভিযান সফল করতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় দিনরাত অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন-এ সময়ের মধ্যে একাধিকবার হামলার স্বীকার হয়ে অভিযান চালিয়ে ৪৪৮ জন অসাধু জেলেকে আটক করা হয়। যারমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ২৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড এবং ১৫২ জনের কাছ থেকে ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পাশাপাশি ১২ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে-২০২৪ সালে মেঘনা নদীতে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় ২২৭টি মামলা, ১০৯ জন জেলেকে কারাদন্ড ও ৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছিলো।
হামলার প্রসঙ্গে সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আলম বলেন-যেকোন মূল্যে সরকারের নির্দেশ পালনে সর্বদা সচেষ্ট ছিলাম, আছি এবং থাকবো। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন-নিষেধাজ্ঞা শুরুর পূর্বে উপজেলার প্রত্যেক জেলেকে নিয়ে অসংখ্যবার মতবিনিময় করেছি। তখন তাদের কাছ থেকে আমরা আশস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর মৌসুমী জেলেদের সাথে মতবিনিময় করা সেইসব জেলেদের নদীতে দেখে খুব কস্ট পেয়েছি।
অপরদিকে আটক জেলেদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের দেয়া মাত্র ২৫ কেজি চালে সংসার চলেনা। সরকারি ক্ষুদ্র সহায়তায় সংসার চালানো কষ্টকর। অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে তারা নদীতে নেমেছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম টেকসই করতে প্রয়োজন সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি জেলেদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের জন্যও আর্থিক সহায়তা দেয়া উচিত। একইসাথে তাদের মধ্যে একটি মোটিভেশনাল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা দরকার-যে তারা দেশের জাতীয় স্বার্থে এই কাজটি করছেন। যদি এভাবে আর্থিক নিরাপত্তা ও প্রেরণা দুটোই নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এ ধরনের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি আর তৈরি হবে না। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ দিনে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় প্রয় সাতশ’ জেলেকে আটক করা হয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.