নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গবেষকদের মতে সারাদেশের বিভিন্ন নদীতে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় তার প্রায় ৩০ শতাংই ভোলা জেলার। বিভিন্ন দিক থেকে ভোলার ইলিশ সুস্বাদু হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা। কিন্তু যাতায়াতের সহজ ব্যবস্থা না থাকায় শিকারের বেশ কয়েকদিন পর ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ইলিশ যেত। ফলে ভোলার তাজা ইলিশ ও আসল স্বাদ থেকে যুগের পর যুগ বঞ্চিত হয়েছেন ক্রেতারা।
অবশেষে ইলিশ ক্রেতাদের এ আক্ষেপ দূর হচ্ছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় দিনাদিন ভোলা থেকে সরাসরি ঢাকায় পৌঁছে যাবে ইলিশ। তাজা ইলিশের স্বাদ পাবেন রাজধানীবাসীসহ সারাদেশের মানুষ। একই সঙ্গে শিকার করা তাজা ইলিশ বিভিন্ন হাতবদল ছাড়াই সরাসরি পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার বাজারে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ভোলার মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের জেলে মো. মিজান মাঝি ও ইউসুফ মাঝি জানান, তারা নদীতে মাছ ধরে সংসার পরিচালনা করেন। প্রতিদিনই তারা নদীতে ইলিশ শিকার করতে যান। জালে আটকা পড়া ইলিশ দ্রুত ঘাটে নিয়ে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেন।
তুলাতুলি মৎস্য ঘাটের আড়তদার মো. মঞ্জু ইসলাম বলেন, ‘জেলেরা ঘাটে আনার পরও ইলিশ লাফালাফি ও নড়াচড়া করে। আমরা দ্রুত সেগুলো নিলাম ডেকে কিনে নিই। এরপর ঝুড়িতে ভরে বরফ দিয়ে ভেদুরিয়া নিয়ে লঞ্চ, ফেরি বা ট্রলারে করে বরিশাল পাঠাই। বরিশাল থেকে কয়েক হাত বদল হয়ে ঢাকার পাইকারি বাজারের যায়। এতে দু-তিনদিন সময় লেগে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ঢাকায় পাঠাতে সাহস পাই না। কারণ, ফেরিতে কদিন অপেক্ষা করতে হয়। সময় বেশি হলে ইলিশ পচে যাওয়ার ভয় থাকে। এবার পদ্মা সেতু হওয়ায় আমরা সরাসরি দিনাদিন ঢাকায় ইলিশ পাঠানোর চিন্তা করছি।’
ভোলা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ বলেন, ‘ভোলার ইলিশ আগে ঢাকাতে পাঠাতে আমার অনেক সমস্যা হতো। সময় বেশি লাগার কারণে পচনের ভয়ে বেশিরভাগ মৎস্য ব্যবসায়ীরা বরিশাল আড়তদের বিক্রি করে দিতেন। বরিশাল থেকে আবার বিভিন্ন হাত বদল হয়ে দু-তিন দিন পর ঢাকায় গিয়ে পৌঁছাতো। ফলে তাজা ইলিশের স্বাদ ঠিকমত পেত না ঢাকার মানুষ। কিন্তু এখন স্বপ্নের পদ্মা সেতু হওয়ায় আমরা ভোলার মৎস্য ব্যবসায়ীরা চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় তাজা ইলিশ পাঠাতে পারবো। রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ তাজা ইলিশের স্বাদটা পাবেন।
ভোলার সচেতন নাগরিক মশিউর রহমান পিংক বলেন, ‘দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। এখানে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন মানুষ ঘুরতে ও বেড়াতে আসেন। কিন্তু তারা ভোলা এসে ইলিশ খেয়ে অবাক হয়ে যান। কারণ, তারা তাজা ইলিশ ঢাকার বাজার থেকে কিনে খেতে পারছেন না। আর যা পাচ্ছেন তার স্বাদ খুবই কম।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পদ্মা সেতু হয়েছে। ভোলার মৎস্য ব্যবসায়ীরা যদি রাজধানীতে প্রতিদিন তাজা ইলিশ পাঠান তাহলে স্বাদ পাওয়া যাবে।
ময়মনসিংহের ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুর রহমান বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন নদীতে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় তার প্রায় ৩০ শতাংই ভোলায় ধরা পড়ে। ইলিশ মূলত সাগর থেকে ভোলার নদীতে আসে। যখন ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মিঠা পানিতে আসে তখন তারা ভালো একটি পরিবেশ ও কাঙ্ক্ষিত খাবার প্রচুর পরিমাণে পেয়ে থাকে। এ কারণে তাদের শারীরিক উন্নতি হতে থাকে। ইলিশগুলো যত সময় ভোলার নদীতে অবস্থান করে ততই তাদের পরিবর্তন হতে থাকে। ফলে ভোলার ইলিশ সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ইলিশ শিকারের পর বরফ দেওয়া ভালো রাখার জন্য। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে বরফে মাছ রাখতে হবে তা অবশ্যই তাজা থাকতে হবে। এছাড়া একবার বরফ দিয়ে প্যাক করে রাখার পর সেই প্যাক খুলে আবারও প্যাক করা হলে মাছের গুণাগুণ নষ্ট হবেই। এতে স্বাদের পরিমাণও কমবে।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :