নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: পর্যটননগরী কুয়াকাটা সৈকতের ধারে এখন নতুন এক মুখরোচক খাবারের দেখা মিলছে। স্থানীয় মো. সোহাগ নামে এক যুবক বিক্রি করছেন ভিন্নধর্মী চানাচুর মাখা। পরিবেশন করছেন পরিবেশবান্ধব কলাপাতায় ও তালপাতার তৈরি চামচ দিয়ে।
সোহাগের মুড়ি মাখায় রয়েছে দেশীয় নানা উপকরণ, যেমন কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, সরিষার তেল, লবণ, চিপস, বাদাম। এ ছাড়া, তিনি এক বিশেষ মসলা দিয়ে থাকেন, যা তার নিজের হাতে তৈরি।
খাবারটির বিশেষত্ব হলো পরিবেশনা। প্লাস্টিক বা থার্মোকল নয়, ব্যবহার করছেন প্রাকৃতিক কলাপাতা এবং তালপাতা। যা পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে সোহাগের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। পর্যটকরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে কিনছেন তার খাবার।
বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় দেখা যায় সোহাগের এই ভ্রাম্যমাণ দোকান। সেখানে পর্যটক ও স্থানীয় ক্রেতাদের ভীড় থাকে চোখে পড়ার মতো।
সবাই সোহাগের চানাচুর মাখানো বিক্রির পদ্ধতি দেখেই তার ক্রেতা হচ্ছেন। এতে সোহাগ যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি ক্রেতারাও পাচ্ছেন ভিন্নতা।
সোহাগ বলেন, সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা সব সময় ভিন্ন কিছু খোঁজেন। তাই আমি চিন্তা করলাম চানাচুর মাখা একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করব। কলাপাতা ও তালপাতায় দিলে পরিবেশও বাঁচে, আবার খাবারও আকর্ষণীয় দেখায়। তা ছাড়া, পলিথিন বা কাগজে চানাচুর মাখা বিক্রি করলে ক্রেতারা খাওয়া শেষে সৈকত এবং রাস্তা ঘাটে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করে।
সেজন্য যেখানে সেখানে এসব পলিথিন এবং কাগজ পড়ে থাকলে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা আমাদের সঙ্গে রাগ করেন। আমি সেজন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছি। কলাপাতা ও তালাপাতা পচনশীল হওয়ায় এগুলো দ্বারা পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আসলে আমাদের সবার উচিৎ প্লাস্টিক এবং পলিথিনের ব্যবহার থেকে সরে আসা।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সিয়াম আহমেদ বলেন, সোহাগের চানাচুর মাখা খেতে দারুণ, আর পরিবেশন দেখেই খেতে ইচ্ছে করে। কলাপাতা ও তালপাতার গন্ধও খাবারে একটা আলাদা স্বাদ যোগ করেছে।
কুয়াকাটার মতো জায়গায় এমন উদ্যোগ পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমি যদিও সচারাচর চানাচুর মাখা তেমন একটা খাই না, তবে আজকে এই আকর্ষণীয় পদ্ধতি দেকে লোভ সামলাতে পারিনি।
ঢাকা থেকে আসা অন্য এক পর্যটক নুসাইবা তানু বলেন, চানাচুর মাখা খেতে তো সবারই ভালো লাগে, কিন্তু কলাপাতায় চানাচুর মাখানো আর তালপাতার চামচে খাওয়ার অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন। যেন প্রকৃতির সঙ্গেই একাত্ম হয়ে খাওয়া। সত্যি কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে যা যা দেখেছি তার মধ্যে ভালো লাগার এটিও একটি বিষয়।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য রাসেল খান বলেন, খাবারের সঙ্গে পরিবেশ সচেতনতার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই আমরা। এটি যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি কুয়াকাটার স্থানীয় খাবার সংস্কৃতিকেও তুলে ধরছে পর্যটকদের সামনে। কুয়াকাটা সৈকতে যারা ফেরি করে বিভিন্ন খাবার বিক্রি করছে, তাদের সবার সোহাগের মতো উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ।
উপকূল পরিবেশ আন্দোলনের (উপরা) সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, সোহাগের মতো তরুণরা আমাদের আশা জাগায়। যেখানে পর্যটন এলাকাগুলোয় প্লাস্টিক দূষণ বেড়েই চলেছে, সেখানে এমন উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা চাই, অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও এর অনুকরণ করুক। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবসা পরিচালনা করা বর্তমান সময়ের চাহিদা।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, সোহাগের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ পর্যটনখাতকে নতুনভাবে চিন্তা করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্লাস্টিকবিহীন, পরিবেশবান্ধব ও সাংস্কৃতিকভাবে সম্পৃক্ত খাবার পরিবেশনা হতে পারে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.