অনলাইন ডেস্ক : সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে বরিশালে মাছের খাদ্য হিসেবে কোনধরনের প্রক্রিয়াজাত না করে ক্ষতিকর মুরগীর বিষ্ঠা সরাসরি ব্যবহার করছেন অধিকাংশ মৎস্য চাষীরা। এতে করে মানবদেহে ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এসব বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় মৎস্য চাষীরা মাছের খাদ্যের দাম বৃদ্ধির খোঁড়া অযুহাতে কোনধরনের প্রক্রিয়াজাত না করেই মাছ চাষে সরাসরি মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করছেন।
অথচ মুরগীর বিষ্ঠা আগে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা উচিত। কারণ কাঁচা বিষ্ঠায় থাকা অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য জীবাণু মাছ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। অথচ মুরগীর কাঁচা বিষ্ঠা সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা হলে ক্ষতিকর জীবাণুর পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়।
বিষয়টি নিয়ে মাছ চাষীদের অংশগ্রহনে সচেতনামূলক সভাসহ মাঠপর্যায়ে সঠিক তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন নাগরিকেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিঘী, পুকুর কিংবা মাছের ঘেরের উপরে লেয়ার এবং পোল্ট্রি মুরগীর খামার তৈরি করে মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন চাষীরা। এসব মুরগীর খামারের বিষ্ঠা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমনকি বয়লার মুরগীর বিষ্ঠা যা স্থানীয় ভাষায় লিটার হিসেবে প্রচলিত তা মুরগীর খামারীদের কাছ থেকে কম দামে ক্রয় করে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, মাছ চাষে মুরগীর বিষ্ঠার ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য ২০১৯ সালে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মৎস্য খামারীদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক সভা করেছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস।
সে সময় মৎস্য চাষীরা পর্যায়ক্রমে মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগীর বিষ্ঠার ব্যবহার বন্ধ করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ওই উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদোন্নতিজনিত কারণে গৌরনদী থেকে বদলী হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি।
মৎস্য খামারীরা জানিয়েছেন, একটা সময় সরকার থেকেই মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হতো। যে কারনে পূর্ব থেকেই তারা এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আসছেন। তারা আরও জানিয়েছেন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি আগে থেকেই মুরগীর বিষ্ঠার ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে খামারীদের সাথে আলোচনা করতেন, তবে অনেক খামারী মাছের খাদ্য হিসেবে বিষ্ঠা ব্যবহার বন্ধ করে দিতো।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে তাদের কখন কোনধরনের পরামর্শ দেয়া হয়নি দাবি করে মৎস্য চাষীরা বলেন-মৎস্য খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারনে অনেক চাষী বিষ্ঠা ব্যবহার করছেন।
গৌরনদী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ দেবনাথ জানিয়েছেন, মুরগীর বিষ্ঠা মাছের খামারে ব্যবহার করলে ওই মাছ মানুষ খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি পুকুরের পরিবেশ নষ্ট হয়ে পানি ব্যবহার করা যায়না। এজন্য মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার বন্ধে খামারীদের সচেতন করা হচ্ছে।
গৌরনদী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ সরকার জানিয়েছেন, মাছ চাষে মুরগীর বিষ্ঠার ব্যবহার সম্পূর্ন অবৈধ। আমরা ইতোমধ্যে তালিকা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি। প্রথমে এটির ব্যবহার বন্ধে প্রাথমিকভাবে খামারীদের সতর্ক করা হবে, তাতে না ফিরলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে কম্পোষ্ট তৈরি করার পর ব্যবহার করলে কোন ক্ষতি নেই। এছাড়াও মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়। আমরা খামারীদের বায়োগ্যাস তৈরিতে উৎসাহ প্রদান করবো।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহতা জারাব সালেহীন বলেন, মুরগীর খাবারে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ও কেমিক্যাল রয়েছে। মুরগীর মল মাছের শরীরে প্রবেশ করলে সহজে তা ধ্বংস হয়না। তাই এগুলো মাছের মাধ্যমে পরবর্তীতে মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য মুরগীর খাবারে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে আনাসহ এবিষয়ে নজরদারির প্রয়োজন।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. ইব্রাহীম জানিয়েছেন, মাছ চাষে মুরগীর বিষ্ঠার ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। এবিষয়ে খামারীদের নিয়ে আলোচনা করে বিষ্ঠার ব্যবহার বন্ধ করা হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.