ডেস্ক সংবাদ : বিসিএস ২৮তম ব্যাচের ইকোনমিক ক্যাডার (বর্তমানে প্রশাসন) কর্মকর্তা গোলাম মো. বাতেন। চাকরির শুরুতেই ২০১০ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সহকারী প্রধান পদে যোগ দেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হয়ে প্রশাসন ক্যাডার হলেও তিনি ওই পদে ছিলেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) মাঠ প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।
মাঠ প্রশাসন বলতে এক বছর দুই মাস উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করেছেন। শনিবার গভীর রাতের প্রজ্ঞাপনে তাঁকে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। সাধারণত এই পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের অন্তত পাঁচ বছরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ইউএনওর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকে। গভীর রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা নিয়ে প্রশাসনে চলছে কানাঘুষা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রবিবার সকালে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে সরকারের কী এমন ক্ষতি হতো?
মাঠ প্রশাসনে এ ধরনের অনভিজ্ঞ কর্মকর্তার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘সরকার কোন বিবেচনায় এ ধরনের কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে পদায়ন করেছে, তা আমার জানা নেই। এটুকু বলতে পারি, মাঠ প্রশাসনে কাজ এবং নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা না থাকলে বিপদ হবে। সামনে কঠিন নির্বাচন হবে।
যাঁদের মাঠে পাঠানো হচ্ছে, তাঁরা নির্বাচনের আগে সংশ্লিষ্ট জেলায় ইতিবাচক ইমেজ বা ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে না পারলে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
গত তিন নির্বাচনে মাঠে থাকা কর্মকর্তাদের সামনের নির্বাচনে রাখা হবে না—সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে এই প্রশাসনসংক্রান্ত বহু গ্রন্থ প্রণেতা আরো বলেন, ‘সরকার যেভাবে চায়, প্রশাসন সেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেন প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসাররা। এ ছাড়া করেন কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। গত তিন নির্বাচনের প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও কি বাদ রাখা হবে? তাহলে সরকার এত লোক কোথায় পাবে? আর তাঁরা যদি এবারও দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে শুধু রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের বাদ দিয়ে কী লাভ হবে?
ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক জনপ্রশাসনসচিব মোখলেস উর রহমানের সময়ের করা ডিসি ফিটলিস্ট থেকে বিসিএস ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহকে বরগুনার ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
তিনি আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৮ সালে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের সময় তিনি আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে সহকারী রিটার্নিং অফিসার (এআরও) ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা চলমান। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁকে ডিসি হিসেবে পদায়ন করায় তোলপাড় শুরু হয়েছে প্রশাসনে। কেউ কেউ বলছেন, এই নিয়োগে অনৈতিক লেনদেন হয়েছে আগের ফিটলিস্টে। এ ছাড়া রবিবার মেহেরপুরের ডিসি হিসেবে পদায়ন পাওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিজ লুত্ফুন নাহার ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে এআরও ছিলেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এআরও থাকার কথা কাছে স্বীকার করে সন্দ্বীপ কুমার সিংহ বলেন, ‘এটা কর্তৃপক্ষ জেনেই পদায়ন করেছে। বিষয়টি তাদের এখতিয়ার।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গত তিন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনে রাখা হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমনকি এখনো যাঁরা ডিসি রয়েছেন, তাঁদের তুলে এনে নির্বাচনের আগে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু গতকাল সন্দ্বীপ কুমার সিংহকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে পুরনো ছয় ডিসিকে বড় জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে অন্তত চারজন ডিসি ২০১৪ সালের নির্বাচনে এআরওর দায়িত্ব পালন করেছেন।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় বিসিএস ২৮তম ব্যাচের ১৬০ জন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ২০ জনকে ডিসির জন্য বাছাই করা হয়েছিল। তাঁদের বেশির ভাগই বিগত নির্বাচনে এআরওর দায়িত্ব পালন করায় এখনো পদায়ন করা হয়নি। শনিবার গভীর রাতে এই ব্যাচের চারজনসহ ১৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জেলার ডিসিকে রদবদল করা হয়েছে। অন্য ৯ জন নতুন কর্মকর্তাকে ডিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের একজন করে, চারজন ২৮তম ব্যাচের এবং তিনজন ২৯তম ব্যাচের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে বিগত নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কাউকে এবার যুক্ত করা হচ্ছে না। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করেননি এমন কর্মকর্তা প্রশাসনে খুবই কম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২৮তম ও ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন ডিসি হওয়ার যোগ্য। তবে তাঁদের বেশির ভাগই ২০১৮ সালের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ছিলেন। আবার এ দুই ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁদের মাঠ প্রশাসনে ন্যূনতম দুই বছর চাকরির অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তাঁরা ডিসি হওয়া থেকে বাদ পড়ছেন। জনপ্রশাসনে ২৮তম ব্যাচের ১৯৬ জন কর্মরত রয়েছেন। ২৯তম ব্যাচের রয়েছেন ১৯৮ জন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ কর্মকর্তার দাবি, মাঠ প্রশাসনে যাঁরা ইউএনও ছিলেন, স্বাভাবিকভাবে তাঁরা সবাই সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এখানে সরকার কাউকে পছন্দ করে সহকারী রিটার্নিং অফিসার (এআরও) বানায়নি। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই তাঁরা নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। সরকারের দেখা উচিত, কারা অতি উৎসাহী ও দলান্ধ হয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন; তাঁদের বাদ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া একটি ব্যাচের একজনকেও ডিসি হিসেবে নিয়মিত পদায়ন না করে পরবর্তী ব্যাচকে ফিটলিস্টের জন্য আহবান জানানো নজিরবিহীন। এতে প্রশাসনের স্বাভাবিক চেইন অব কমান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। সাধারণত প্রতিটি ব্যাচের সদস্য দু-তিনবার ফিটলিস্টের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। কিন্তু ২৮তম ব্যাচকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হলো বলে এই ব্যাচের কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.