নিজস্ব প্রতিবেদক : বরগুনার আমতলী উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর, ক্রয় কমিটি ও গুদাম কর্তৃপক্ষ বোরো ধান ক্রয়ে অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা ভুয়া কৃষক তালিকা তৈরি করে ধান ক্রয় করেছেন এমন অভিযোগ প্রান্তিক কৃষকদের।
এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ক্রয় কমিটির লোকজন যোগসাজসে আর্দ্রতার অজুহাত দেখিয়ে কৃষি অফিসের দেওয়া তালিকাধারী প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেননি। সিন্ডিকেট সদস্য দেলোয়ার হোসেন বাজার থেকে ১ হাজার ১৪০ টাকায় ধান ক্রয় করে খাদ্য গুদামে ১ হাজার ৪৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন। যিনি ধান ক্রেতা, তিনিই বিক্রেতা, আবার তিনিই তার ধান থেকে মিলে চাল করেছেন। এতে মণপ্রতি তারা ৩০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি প্রান্তিকদের কৃষকদের।
জানা গেছে, এ বছর বোরো ধান সংগ্রহ করতে আমতলী উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরকে ২১৯ মেট্রিকটন বরাদ্দ দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত ৩১ আগষ্ট ওই ধান সংগ্রহ শেষ হয়। ১ হাজার ৪৪০ টাকা মণ দরে এ ধান প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অভিযোগ রয়েছে, প্রান্তিক কৃষকরা ধান নিয়ে এলে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ আর্দ্রতার অজুহাত দেখিয়ে ধান ক্রয় করেননি। কিন্তু উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর ও ক্রয় কমিটির লোকজন মিলে সিন্ডিকেট গড়ে আর্দ্রতা পরিমাপ না করেই বাজার থেকে কম দামে ধান ক্রয় করেছেন। এতে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর ও ক্রয় কমিটি সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করেননি।
আরও অভিযোগ রয়েছে, তারা সিন্ডিকেট গড়ে ভুয়া কৃষক তালিকা তৈরি করে বাজার থেকে নিম্নমানের ধান ১ হাজার ১৪০ টাকা মণ দরে ক্রয় করে খাদ্য গুদামে ১৪৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে মণপ্রতি তারা ৩০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই হিসেবে ২১৯ মেট্রিকটন ধানে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর ও ক্রয় কমিটির এমন কর্মকাণ্ডে প্রান্তিক কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাগজে-কলমে ৭৩ জন কৃষকদের কাছ থেকে তিন টন করে ২১৯ মেট্রিক টন ধান ক্রয় দেখালেও বাস্তবে কোনো কৃষক খাদ্য গুদামে ধান দেননি। ভুয়া তালিকার মধ্যে ফাতেমা রাইস মিলের মালিক দেলোয়ার হোসেন কিছু কৃষককের কাছ থেকে ১ হাজার ১৪০ টাকা মণ দরে ধান ক্রয় করেছেন। ওই ধান দেলোয়ার খাদ্য গুদামে ১ হাজার ৪৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তারাই সিন্ডিকেট চক্র নয়-ছয় করে কৃষকদের স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
রোবো সংগ্রহের ৭৩ জন কৃষক তালিকার মধ্যে ১৫ জন কৃষকদের মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে ১০ জন কৃষকের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এ তালিকার অধিকাংশ কৃষকের বাড়ি সিন্ডিকেট সদস্য ফাতেমা রাইস মিল মালিক দেলোয়ার হোসেনের কড়াইবুনিয়া গ্রামের বাড়ির এলাকার দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ওই গ্রামের এমন কৃষক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তালিকার তিনজন কৃষককের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউ খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করেননি। তারা ফাতেমা রাইস মিল মালিকের কাছে ১ হাজার ১৪০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন।
তালিকার ৫, ১৩, ৩৪, ৩৭, ৩৯, ৪০, ৫২ ও ৬৪ নম্বরের কৃষকের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। ৪৪ নম্বর তালিকার রেজাউল বলেন, ‘আমার বাড়ী কিশোরগঞ্জ। আমি কীভাবে আমতলী খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করবো?
কড়াইবুনিয়া গ্রামের কৃষক শাহ জালাল গাজী বলেন, ১ হাজার ১৪০ টাকা মণ দরে ফাতেমা রাইস মিল মালিক দেলোয়ার হোসেনের কাছে ৪৫ মণ ধান বিক্রি করেছি। তিনি আরও বলেন, ওই ধান দেলোয়ার হোসেন খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছেন।
জাহানারা নামের এক কৃষাণী বলেন, ৭০ মণ ধান ফাতেমা রাইস মিলে ১১৪০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। আমি খাদ্য গুদামে যাইনি। দেলোয়ার আমাকে হিসেব করে টাকা দিয়েছেন।
কৃষক নজরুল ইসলাম ও আউয়াল বলেন, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়েছিলাম কিন্তু গুদাম কর্তৃপক্ষ আর্দ্রতা কম বলে ধান ক্রয় করেনি। পরে টমটম ভাড়া দিয়ে ধান ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।
ফাতেমা রাইস মিল মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার মিল এলাকার ও মিলের কাজ করে এমন বেশিরভাগ লোকজনের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেছি। ওই ধানই খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছি। তিনি আরও বলেন, খাদ্য গুদামের ২১৯ মেট্রিকটন ধানই আবার আমার মিলে চাল করে দিয়েছি।
আমতলী খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (এলএসডি) শান্তি রঞ্জন দাসের কাছে ধান ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে বলেন, আমি একটু ব্যস্ত আছি।
আমতলী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শারমিন জাহান ধান ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করেই ধান ক্রয় করা হয়েছে। ‘ধান ক্রয়ের বিষয়ে কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি অফিসার জানেন না, তাহলে কীভাবে ধান ক্রয় করছেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কম ধান ক্রয় করা হয়েছে বিধায় তিনি নাও জানতে পারেন।
বোরো ধান ক্রয় কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ মোঃ রাসেল বলেন, ধান ক্রয় কমিটির সদস্য হলেও ধান ক্রয়ের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কিছু কৃষক ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে গিয়েছিল কিন্তু তারা আর্দ্রতার অজুহাত তুলে ধান ক্রয় না করে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, এ বিষয়ে আমি জানি না। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.