স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল: বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ কার্যালয়ের পাশেই চিকিৎসকদের গাড়ির গ্যারেজ। চিকিৎসকরা সকলে নিয়মিত কলেজে না আসায় গ্যারেজ প্রতিদিন প্রায় ফাঁকা থাকে। তবে গতকাল বুধবার গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। কলেজের গ্যারেজ গাড়িতে পরিপূর্ণ।
অন্তত ১৫টি গাড়ি রয়েছে গ্যারেজে। শুধু কি গ্যারেজে, অধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনের গাড়ির দীর্ঘ সারি। সেখানেও জায়গার সংকুলন হচ্ছিল না, তাই অধ্যক্ষের কার্যালয়ের পেছনের গেটে ছিল প্রাইভেট কারের সারি। গ্যারেজের বাইরে আরো ২০ বেশির গাড়ি ছিল। গাড়িগুলো মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকদের।
হঠাৎ কলেজ ক্যাম্পাসজুড়ে গাড়ির এই সারি দেখে রোগীর স্বজনরাসহ মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরাও অবাক হয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার (০৬ সেপ্টেম্বর) কলেজে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযান পরিচালনা করে। এরপরই বুধবার সঠিক সময় কলেজে আসেন শিক্ষকরা। আর এই কারণেই কলেজের গ্যারেজ এবং পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষকদের গাড়ির সারি ছিল।
যদিও মেডিক্যাল কলেজে দুদকের হঠাৎ উপস্থিতি নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে স্বারকলিপি দিয়েছেন। অপর দিকে দুদক অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ব্যাখ্যাও দিয়েছে।
উল্টো চিত্র ক্যাম্পাসে : শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের গাড়ির গ্যারেজে দায়িত্বে থাকা এক কর্মচারী বলেন, গ্যারেজে এরকম ভিড় থাকে না। সব স্যারেরা কখনই একসাথে কলেজে আসেন না। আজ মনে হয় স্যারদের জরুরি সভা আছে। তাই একসাথে এসেছেন এবং গারেজ ও কলেজের ক্যাম্পাসে গাড়িতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
কলেজের হাজিরা খাতার স্বাক্ষর ও এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায় বুধবার কলেজে কর্মরত আটজন অধ্যাপক এসেছিলেন। তারা কখনোই সকলে একসাথে কলেজ আসেন না।
কলেজের সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার অমল চন্দ্র পাল, এন্ড্রোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার মো. আজিজুল হক, প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার মো. সাইদুর রহমান, শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার উত্তম কুমার সাহা, ডাক্তার মো. মুজিবুর রহমান তালুকদার, সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাক্তার জি এম নাজিমুল হক একসাথে কলেজে উপস্থিত ছিলেন। এমনটা এর আগে কখনো হয়নি। এর বাইরে কলেজের অন্তত ২০টি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকরা কলেজে উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, যে সকল অধ্যাপকদের আজকের আমরা পেয়েছি তাদেরকে এর আগে পাওয়া যায়নি। নতুন শিক্ষার্থীরা হয়তো এদেরকে চিনেন না। দুদক অভিযান পরিচালনা করার পর অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক সকল শিক্ষকরাই কলেজে এসেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
কলেজ অধ্যক্ষর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, অধিকাংশ শিক্ষক কলেজে আসেন না। এমনকি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তারা উপস্থিতির হাজিরাও দেন না। তাদের জন্য বিকল্প হাজিরা খাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে তারা মাসে দুই অথবা তিনদিন এসে একসাথে স্বাক্ষর করে দেন। আর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যে হাজিরার সিস্টেম রয়েছে সেখানে বলা হয় মেশিন নষ্ট অথবা ব্যস্ততার কারণে শিক্ষকরা হাজিরা দিতে পারেননি।
তবে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, শিক্ষকরা কলেজের ঠিকই আসেন। কেউ চলে যান হাসপাতালে রোগী দেখার জন্য আবার কেউবা ব্যস্ত থাকেন ক্লাসে। আর এ কারণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা দেওয়া অনেক সময় হয় না। তাই বিকল্প একটি হাজিরা খাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে কারচুপির কোনো বিষয় নেই।
চিকিৎসকদের স্মারকলিপি : চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশাল শাখা কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়নের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিভাগীয় কমিশনাররের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে দুদকের অভিযান দিয়ে বাদানুবাদের ঘটনা নিয়ে বুধবার ওই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান।
স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বিএমএর বরিশাল শাখার সভাপতি ডা. মো. ইসতিয়াক আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক ও শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন সাগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. মাসরেফুল ইসলাম সৈকত, সাংস্কৃতিক ও বিনোদন সম্পাদক ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী, সদস্য ডা. এসএম সারওয়ার, ডা. সুদীপ কুমার হালদার, ডা. মো. নুরন্নবী তুহিন, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, ডা. আশীক দত্ত। এ ছাড়াও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম, কলেজের উপাধাক্ষ্য ডা জিএম নাজিমুল হক উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের বরিশাল কার্যালয়ের উপপরিচালক দেবব্রত মন্ডল বলেন, কারো সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করা হয়নি। তদন্ত করে যা পেয়েছি, সেই প্রতিবেদন ঢাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। তদন্তের কি উঠে এসেছে সেই বিষয়ে ঢাকা থেকে বিস্তারিত জানাবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদক যা বলছে: এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন বাংলাদেশ এর একটি পেইজে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে অভিযানের বিষয়ে একদিন পরে গতকাল বুধবার বিবৃতি প্রদান করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, দুদক হট লাইনে ফোন করে চিকিৎসকদের কলেজে অনুপস্থিত থাকা, ব্যক্তিগত চেম্বারে সময় দেওয়া, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততা, ইন্টান চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা প্রদান করার বিষয়ে অভিযোগ করা হয়।
ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের একটি টিম শেরে-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলে। অভিযান পরিচালনাকারী টিম পরবর্তীতে অভিযানের বিষয় প্রতিবেদন দাখিল করবে। কালের কণ্ঠ
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :