অর্থ প্রতিবেদক : পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী গ্রামে পৌঁছালেই চোখে পড়বে বিশাল দুটি বিল। একটির নাম চামগড়া অপরটি পদ্ম। এ দুই বিলজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ৪৫০ পুকুর। প্রতিটি পুকুরেই হচ্ছে মাছ চাষ। আর এতেই ভাগ্য ফিরেছে মারমী গ্রামাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন কিলোমিটার প্রস্ত এ দুই বিলে একসময় বছরজুড়ে জলাবদ্ধতা ছিল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শুধুমাত্র শীতকালে বিলের এক তৃতীয়াংশ জমিতে ধান চাষ হতো। বাকি সময় জলবদ্ধতার কারণে অনাবাদি থাকতো এসব জমি। প্রায় ১৫ বছর আগে এ বিলের জমির মালিকরা পুকুর খনন শুরু করে। খননের মাটি পুকুরের চার পাশের পাড় প্রশস্ত করে ভরাট করে। পুকুরের পাড় উচুঁ হওয়ায় সবজি ও ফলমূলের আবাদের উপযোগী হয়। এক সময় জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা শত শত একর জমিজুড়ে এখন শুধু পুকুর আর পুকুর। প্রতি বছরই বেড়েই চলেছে পুকুরের সংখ্যা।
মাছচাষিরা জানান, মারমী গ্রামজুড়ে রয়েছে চামগড়া ও পদ্ম বিলের বৃহৎ অংশ। পাশাপাশি সুলতানপুর, হাতিগড়া, বয়রা, শ্যামপুর গ্রামেও রয়েছে এ দুই বিলের সীমানা। বিলের পার্শ্ববর্তী পাঁচ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এক সময় দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করতো। তবে মাছ চাষ বদলে দিয়েছে এখানকার অর্থনীতি। এখানে মাছ চাষে প্রায় তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
মারমী গ্রামের মাছচাষি সোহেল রানা জানান, এক সময় বিলের অধিকাংশ জমি অনাবাদি ছিল। বছরজুড়ে জলাবদ্ধতা থাকতো। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বছরের একবারের বেশি ফসল হতো না। এসব অনাবাদি জমিতে পুকুর খনন করে মালিকরা যেমন লাভবান হয়েছে, তেমনি পুকুর লিজ নিয়ে মাছচাষ করেও অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখানকার হাজারও মানুষ মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মাছের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে সবজি ও ফলমূল চাষের সুযোগ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি তিনটি পুকুরে মাছ চাষ করি। প্রতিবছর মাছ চাষে যে লাভ হয় তা সংসার খরচ বাদেও সঞ্চয় হয়। আমার মতো শত শত মাছচাষি এখন স্বাবলম্বী।
দাশুড়িয়া গ্রামের মাছচাষি সাইফুল ইসলাম জানান, এ দুই বিলে ছোট পুকুর বেশি। এখানে সর্বনিম্ন ১০ কাটা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৭ বিঘার বিশাল পুকুরও রয়েছে। পুকুরে দেশি-বিদেশি মাছ চাষ হয়। রুই, সিলভার, মৃগেল, শরপুঁটি, চিতল, কাতল, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এখানে চাষ হয়। এসব মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরও যাচ্ছে।
লাডুলি গ্রামের মাছচাষি শরিফুল ইসলাম মণ্ডল জানান, বিলের সবচেয়ে বড় ৩৭ বিঘার পাশাপাশি মোট আটটি পুকুরে মাছ চাষ করি। খরচ বাদ দিয়ে বছরে আয় হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। আমার মতো অনেক মাছচাষি রয়েছে যাদের ভাগ্যের পরিবর্তন এই বিল থেকে হয়েছে। তবে মাছের খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছচাষিদের লাভ কমেছে।
তিনি বলেন, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ২৫ কেজি ওজনের মাছের খাদ্যে ৬০০ টাকার পরিবর্তে ১২০০ টাকা হয়েছে। এভাবে খাবারের দাম বাড়তে থাকলে চাষিরা লোকসানে পড়ে মাছ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার জানান, জলাবদ্ধতার কারণে বহু বছর ধরে এ দুই বিল অনাবাদি ছিল। চার বছর আগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়। ফলে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক পুকুরে শুরু হয় মাছ চাষ। যার বিশাল প্রভাব এ এলাকার অর্থনীতিতে পড়ছে। মাছচাষিরা এখন স্বাবলম্বী। পাশাপাশি শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা জানান, ঈশ্বরদীতে মোট ২৪৭৬ পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে মুলাডুলি ও দাশুড়িয়া ইউনিয়নে পুকুর বেশি। দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী ও সুলতানপুরসহ পাশ্ববর্তী গ্রামে মাছের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। এখানকার মৎস্যচাষিরা দেশি জাতের মাছ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছে।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :