আমতলীতে বিদেশ ফেরত ইলিয়াছের ভাগ্য খুলল ড্রাগন চাষে


Barisal Crime Trace -FF প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১১, ২০২২, ৬:৫৬ অপরাহ্ণ /
আমতলীতে বিদেশ ফেরত ইলিয়াছের ভাগ্য খুলল ড্রাগন চাষে

স্টাফ রিপোর্টার, আমতলী : বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের প্রথম ড্রাগন ফল চাষি ইলিয়াছ। স্থানীয়দের কাছে তিনি ড্রাগন ফল চাষি হিসেবেই পরিচিত। মাত্র এক বছরে ইলিয়াস এ ফল চাষে সফলতা লাভ করেন। ইলিয়াছ বলেন, আমি প্রবাসফেরত।

আমি বিদেশে বসেই টিভিতে ও ইউটিউব চ্যানেলে আধুনিক কৃষির ওপর নির্মিত ভিডিওগুলো দেখে কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ হই। ৫ বছর কাতার থাকার পর দেশে এসে আধুনিক কৃষিতে আত্মকর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ২০১৮ সালের শেষের দিকে চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামে এক মসজিদের ঈমামের কাছ থেকে ১ একর ২০ শতাংশ জমি লিজ নেই। শুরুতে জমিতে ১০০টি সিমেন্টের খুটির ওপর পরীক্ষামূলক বিভিন্ন জাতের ড্রাগন চাষ করি। পাশাপাশি মাল্টা, থাই পেয়াড়া, বিভিন্ন জাতের আম, লেবু ও সবেদার চাষ করি। ফলন ভালো হওয়ায় চলতি বছরের প্রথম দিকে বাগানের পাশে জনৈক আরেক এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১ একর ৮০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ওই জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে আরো ৯০০টি সিমেন্টের খুঁটিতে ১২ মিলি রড়ের উপড়ে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে ড্রাগন গাছের চারা রোপণ করি। বেড়া, গেইট ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ এ পর্যন্ত ড্রাগন বাগানে আমার ৩০ লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল বিক্রি করতে পারব তা আগে ভাবিনি। বাগানে শুধু মাত্র থাই রেট ও মালয়েশিয়ান রেট জাতের ড্রাগনের চারা রোপণ করেছি। গত বছর প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এ পর্যন্ত আমার দেড় লাখ টাকা আয় হয়েছে। আমি অত্যন্ত খুশি।

ইলিয়াছ জানান, ড্রাগনের গাছ সোজা রাখার জন্য জমিতে সিমেন্টের খুঁটি স্থাপন করা হয়। জমিতে নির্দিষ্ট ৮ ফিট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রেখে জমিজুড়ে খুঁটি স্থাপন করে প্রত্যেক খুটির মাথায় একটি করে পরিত্যক্ত টায়ার বেঁধে দেওয়া হয়। খুঁটির পাশেই ড্রাগন চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি ড্রাগন গাছ লাগানোর পর আট থেকে দশ মাসে ফুল আসে। আবার কোনো কোনো গাছে ১২ মাসে ফুল ও ফল আসে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ড্রাগন বাগানটি দেখতে এসে ভিড় জমান।

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এ এলাকার মাটি এবং আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সর্বদা বাগানটি পরিদর্শন করে চাষিকে উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ থেকে শুরু করে তাদের উৎসাহ দিতে যাবতীয় টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকি। ড্রাগনের একাধিক জাত রয়েছে। সাদা, ও লাল রংয়ের ড্রাগন ফল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও সুস্বাদু। একটি গাছ থেকে ১ মণ ফল আহরণ সম্ভব এবং ২০ বছর যাবৎ ফল আহরণ করা যায়। তবে প্রচন্ড শীতে ফল উৎপাদনে ব্যাহত হতে পারে তাই গাছের উপর লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।

তিনি আরো জানান, বিদেশফেরত ইলিয়াছের এই সাফল্য এলাকার অন্যসব কৃষকদের অনুপ্রাণিত করবে। স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজ উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে অন্যান্য অবদান রাখার স্বপ্ন দেখছেন চাষি ইলিয়াছ।