নিজস্ব প্রতিবেদক : সাগরপারের জনপদ উপকূলীয় কলাপাড়ায় গত ১৫ বছরে কৃষি জমি কমেছে অন্তত ১৫ হাজার একর। কিন্তু ফলন কমেনি, উল্টো ৪২ হাজার মেট্রিক টন চালের উৎপাদন বেড়েছে। যেখানে ২০১০ সালে আমন চালের উৎপাদন ছিল ৩৮ হাজার এক শ’ ৫০ মেট্রিক টন। তখন চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল দুই হাজার ১৪ মেট্রিক টন। সেখানে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ফলন হয়েছে এক লাখ ৪৬৮ মেট্রিক টন। বর্তমানে এখানকার বছরের চাহিদা রয়েছে ৫৭ হাজার ৬১৩ মেট্রিক টন। ৪২ হাজার ৮৫৫ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন উদ্ধৃত্ত হয়েছে। যেখানে ২০১০ সালে উফশী ধানের আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৩০৩ একর জমিতে। সেখানে ২০২৪ সালে আবাদ হয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার একর জমিতে। এই অর্থবছরে মোট আবাদ হয়েছে ৭৬ হাজার ৫১৩ একর জমি। ১৫ বছরে কলাপাড়ায় উফশীর আবাদ বেড়েছে ৩৭ হাজার একর জমিতে। জমি কমলেও এর কোন প্রভাব পড়েনি উৎপাদনে। কৃষকরা উদ্যমী হয়ে উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের আবাদ করা এবং প্রশিক্ষিতভাবে আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের সুফল এ জনপদে খাদ্যউৎপাদনের অগ্রগতি ধরে রেখেছেন। কৃষকের উদ্যমি উদ্যোগ আর সরকারের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা কৃষকের কাছে মূল সহায়কের কাজ করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ জনপদ পর্যটন সমৃদ্ধ কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর, একাধিক বিদ্যুতকেন্দ্র, নৌঘাটি নির্মাণ, বিভিন্ন পুনর্বাসন প্রকল্প, ফোরলেন, সিক্সলেন সড়ক, বেসরকারি উদ্যোক্তাসহ কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার উন্নয়ন ছাড়াও মানুষের অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণে গত ১৫ বছরে অন্তত ১৫ হাজার একর কৃষি জমি কমেছে। কিন্তু কৃষি উৎপাদন কমেনি। বরং চাহিদার চেয়ে প্রায় দেড়গুন উদ্ধৃত উৎপাদনের এই জনপদে ধানসহ কৃষি উৎপাদন আরও বাড়ছে। উচ্চফলনশীল জাতের ধান, শাকসবজির উৎপাদনের পাশাপাশি এক ফসলি জমি তিন ফসলের আওতায় আনা এবং উৎপাদন খরচ কমাতে উন্নত আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহারে কৃষক এ সাফল্য ধরে রেখেছেন। উফশী জাতের আবাদ এবং আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদের কারণে কৃষি জমি কমলেও উৎপাদনে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এমনকি বাড়িঘরের আঙিনা পর্যন্ত শাক-সবজির আবাদের আওতায় আনা হয়েছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব সাফল্যগাঁথা তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে কৃষি উৎপাদনে বৈপ্লবিক ধারা বইছে। হাজার হাজার কৃষককে বিনামূল্যে ধান, শাক-সবজি, রবিশস্যের বীজ, সার প্রদান করা হয়। ভর্তুকিমূল্যে আধুনিক চাষাবাদের যন্ত্রপাতি, রোপন, কাটা, মাড়াইসহ বিভিন্ন কৃষিকাজের উপকরণ সরবরাহ করায় কৃষক বাড়তি উৎপাদনের এই সাফল্য ধরে রেখেছে। এরই মধ্যে এবছর ধানের দাম আশাতীত পাওয়ায় কৃষকরা স্বস্তিতে রয়েছেন। ওই উৎসাহে এখন কৃষকরা কোমর বেধে নেমেছেন বেরোর হাইব্রিড আবাদে। করছেন বীজতলা। প্রত্যেক বছর ক্রমশ বাড়ছে বোরার আবাদ।
নীলগঞ্জের কুমিরমারা গ্রামের প্রবীণ কৃষক সুলতান গাজী জানালেন, ২০০৭ সালের সিডর সাইক্লোনের পরে প্রথমে ব্রাকের মাধ্যমে পাওয়া আলোড়ন জাতের ধানের চাষাবাদ শুরু করেন। এরপরেই ২০০৮ সাল থেকে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ শুরু করেন। যেখানে আগে রাজাশাইল, কাজলশাইল ও মোটা ধানের আবাদ করে একর প্রতি ফলন পেতেন ১৫ মণ। এখন সেখানে উফশী জাতের ২৩, ৫১ ধানের আবাদ করে ফলন পাচ্ছেন একর প্রতি অন্তত ৬০ থেকে ৭০ মণ। একারণে কৃষি জমি কমলেও উৎপাদন কমেনি। তবে এই চাষী প্রয়োজনীয় মিঠা পানির সংকটের কথা জানালেন। তাঁদের পানির উৎস্য পাখিমারার খালটি ভরাট হয়ে গেছে। পুনর্খনন দরকার।
কৃষি অফিস কলাপাড়ার দেয়া তথ্যমতে, ২০০৮ সালে কলাপাড়ায় উফশি জাতের ধানের আবাদ হয় মাত্র ২০ হাজার ৩০৩ একর জমিতে। ফলন হয় ২৮ হাজার ৭৭০ মেট্রিক টন চাল। ২০২৩ সালে উফশি জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ৫৬ হাজার ৯১১ একর জমিতে। আর ফলন হয়েছে ৬৫ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন চাল। অথচ উল্টোচিত্র চাষাবাদের জমির হিসেবে। ২০০৮ সালে স্থানীয় জাতসহ মোট আবাদি কৃষি জমি ছিল ৯১ হাজার ৩৪২ একর। আর এখন ২০২৪ সালে কমে চাষের জমির পরিমাণ হয়েছে ৭৬ হাজার ৬১৩ একর। সরকারী হিসেবে কলাপাড়ায় চাষের জমি কমেছে ১৫ হাজার ৪২৯ একর। যেখানে ফলন কমার কথা ৩৭ হাজার মেট্রিক টন চাল। উল্টো ফলন বেড়েছে অন্তত ৪২ হাজার মেট্রিক টন।
কলাপাড়ায় বর্তমানে ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুসারে লোকসংখ্য দুই লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৩ জন। যার জন্য বছরে সর্বোচ্চ খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৫৭ হাজার ৬১৩ মেট্রিক টন চাল। যেখানে উৎপাদন হচ্ছে এক লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন জানান, কৃষি উৎপাদনের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে ফি বছরের মতো এ বছরও হাজার হাজার কৃষককে উন্নত জাতের বীজ ধান ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সকল ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মিঠাপানির ব্যবহার নিশ্চিতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে। তারপরও বহু কৃষক নিজের প্রয়োজনে ধার-দেনা করে বীজ-সার কিনে কোমর বেধে উফশী জাতের ধানের আবাদ করছেন। সকল কৃষকের দাবি একটাই সংযুক্ত খালের অগ্রভাগে লোনা পানির প্রবেশ ঠেকানোর জন্য সরকারি উদ্যোগে এখনই বাঁধ দিতে হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.