ডেস্ক সংবাদ : আপাত কঠিন একটি বিষয় যা ঠিক ধরা বা ছোঁয়া যায় না, কিন্তু বাবা-মা হিসেবে প্রতি পদে পদে অনুভূত হয় আজীবন। সন্তান প্রতিপালন প্রতি মুহূর্তে অজানা আশঙ্কা এবং নতুন অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান এক যাত্রা।
সন্তান প্রতিপালনকে কখনো কোনো ধরাবাঁধা ছকে ফেলা যায় না, এই ধ্রুব সত্যটা বুঝতে পারা আসলেই খুবই প্রয়োজন। কারণ, বাবা-মা দুটো ভিন্ন পরিবার থেকে আসেন, তাদের দু’জনের বেড়ে ওঠা এক রকম ছিল না। আবার একই বাবা-মায়ের প্রতিটা সন্তান কখনো এক রকমের হয় না।
এক সন্তানকে যেটা বললে কাজ হয় অন্যজনকে সেটা বলে না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমি নিজে মা হয়ে অন্তত তাই দেখেছি, তাই গদবাঁধা নিয়মে মেনে সন্তান পালন খুবই ভুল একটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটা মানুষ আলাদা।
এখন আসি সঠিক সন্তান প্রতিপালন কী?
পনেরো বছরের প্রবাস জীবন, সঙ্গে নিজের পড়াশোনা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং পারিপার্শ্বিক মাল্টিকালচারাল সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশ ও জাতির মানুষদের পর্যবেক্ষণ করে আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ বাবা-মা জানেন না সঠিক পারেনটিং কি? জ্বী সত্য।
আমি যেহেতু বাংলাদেশে বড় হয়েছি, খুব ভালো করেই জানি, এই সংখ্যা অনেক। বাবা-মা যে বিত্তেরই হোক, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত… একই চিত্র। অন্তত ৮৫ শতাংশ বাবা-মা দেশে জানেন না সঠিক পারেনটিং কি। যে ১৫ শতাংশ জানেন তাদের সন্তানেরা নি:সন্দেহে ভাগ্যবান। এ পর্যন্ত পড়ে কেউ কেউ ঢোক গিললেও ঘটনা সত্য, বিরক্তি এলেও তিতা সত্য।
পরে বুড়া-বুড়িকালে বেশিরভাগ বাবা-মা হা পিত্তেস করেন। ছেলে-মেয়েদের অভিশাপ দেন, মন:পীড়ায় ভোগেন, অথচ বুঝতেই চান না তাদের ভুল কোথায় ছিল। এটাই আমাদের জাতিগত সমস্যা।
আমরা নিজেদের কোনো দোষ খুঁজে পাই না, সব দোষ সব সময়েই নন্দঘোষের ঘাড়ে চাপিয়ে বেঁচে যেতে যাই। গঠনমূলক সমালোচনা আর সবকিছুতেই না বুঝে টিপ্পনি কাটা যে এক বিষয় না, সেটাও আমরা বুঝতে রাজি না।
বুঝলে সমস্যা আস্তে আস্তে হলেও উন্নতি হতো… এখনো দেশের বেশিরভাগ পিতা-মাতা সন্তানদের ঠিকমতো মানুষ বানানোর চেয়ে চিকিৎসক ইঞ্জিনিয়ার বা বিসিএস ক্যাডার বানানোর চিন্তায় বিভোর থাকে।
আমি যদি ঠিকমতো আমার সন্তান প্রতিপালন করতে না পারি, তাহলে আমার ভাগেও পস্তানি আছে। কোনো ছাড় নেই। তাই বলে এই নয় যে, আমি যেটা সঠিক বলে জানি বা মানি সেটা বলবো না।
অনেক বিখ্যাত শিক্ষক আছেন যারা তাদের আলোয় অনেককেই আলোকিত করেছেন কিন্তু হয়তো তাদের সন্তানরা অতটা আলোকিত হয়নি, তাই বলে শিক্ষকের শিক্ষাদানে কিন্তু গাফিলতি ছিল না। আপনি শিক্ষকের দেওয়া শিক্ষা কতটুকু নিজের মাঝে ধারণ করতে পেরেছেন সেটা পুরোপুরি আপনার দক্ষতা।
সন্তান প্রতিপালন ও খানিকটা তেমন, আপনাকে বাবা-মা হিসেবে সঠিক উদাহরণ হতে হবে, আপনার সন্তান কতটুকু নিজের মাঝে ধারণ করবে সেটা তার ইচ্ছে, ধারণ ক্ষমতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। আপনি বাবা-মা হিসেবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারেন সন্তানের আগ্রহ আর ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে, আর কিছু না।
আপনি চোখ বন্ধ করে নিজেদের ছোট বেলা মনে করে দেখুন তো, কয়জন বলতে পারবেন। ছেলেবেলায় নিজের পরিবার থেকেই তিরস্কার, অপ্রাধান্য, তুলনা, খারাপ ব্যবহার, গায়ের রং, চেহারা, উচ্চতা নিয়ে মানসিক হয়রানির স্বীকার হননি?
নিজেই ভেবে দেখুন ছোটবেলা কি মসৃন ছিল মার্বেল টপ টেবিলের মতো? কখনো মনে হয়নি বাবা-মা আপনার চেয়ে অন্য ভাই বা বোনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে, বা কেন ফার্স্ট হতে পারেননি ক্লাসে বা কেন তমুক সাবজেক্টে চান্স পাননি বা নিজের বিয়েতে কোনো পছন্দ থাকা যাবে না, বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ইত্যাদি নানা পদের ইতিহাস মনে ভেসে আসবে।
সবকিছুই ভুল পারেনটিং। মা বাবা হয়ে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিলেই সন্তানের মগজ ও মনের দখল পাওয়া যায় না, আর জোর করার ফলাফল ভয়াবহ হয়। সে তো চারপাশে ইদানিং তাকালেই দেখা যায়, শোনা যায়। একটা জেনারেশন বেশিরভাগ বাবা-মা যা করে এসেছেন। আসুন আমার সেটা থেকে বেরিয়ে আসি। নিজেদের সন্তানের জীবন আশঙ্কামুক্ত এবং নিজেদের নিরাপদ প্রমাণ করি সন্তানের কাছে।
ভুল পারেনটিং শিশুর মনোজগৎ তছনছ করে দেয়, হয় তারা ছোটবেলাতেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে নয়তো পুরোপুরি বাবা-মাকে মেনে নিয়ে রোবোটের মতো বড় হয় এবং পরে বড়বেলায় ওই বাবা-মায়ের সঙ্গে তেমন একটা সম্পর্ক রাখে না এবং সম্পর্কের যে শীতলতা তৈরি হয় তা আর কমে না, সবকিছুই ধরাবাঁধা দায়িত্বে চলে আসে।
এত কথার পরেও পারেনটিংয়ে কিছু নিয়ম অবশ্যই রয়েছে যা কিনা শিশুর মনোজগৎকে গঠনমূলক সৃষ্টিশীল ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
সেগুলো কী? সংক্ষিপ্ত করে বর্ণনা করা হলো-
সন্তান প্রতিপালনের আগে সবার আগে বাবা-মায়ের পারস্পরিক বোঝাপোড়া থাকাটা খুবই জরুরি। বাবা একভাবে সন্তান প্রতিপালন করতে চান, মা হয়তো অন্যভাবে; তাহলে সেই সন্তান কোনোটাই শিখবে না, তার নিজের মতো চলবে, সন্তানের স্বার্থে হলেও বাবা-মায়ের মতের মিল থাকা প্রয়োজন, নতুবা বিদ্রোহী সন্তান সময়ের ব্যবধান মাত্র।
সন্তানের মন বোঝার চেষ্টা করুন, মানুষ হিসেবে তার স্বভাব কেমন, সে কিসে খুশি হয়, কিসে বিরক্ত হয় বোঝার। চেষ্টা করুন, বন্ধু হওয়ার দরকার নেই কিন্তু পারস্পরিক দূরত্ব যেন না থাকে। আপনার সন্তান যেন যেকোনো বিষয়ে আপনার সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে, সংকোচ না করে।
সন্তানকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলুন, বাসার ছোট ছোট বিষয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন বা মতামত জানতে চান। তার মতামত কে যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সেটা তাকে অনুভব করতে দিন। (ভুলেও বলতে যাবেন না, তুমি কি আমার চেয়ে বেশি বোঝো? বা এসব তোমার ভাবতে হবে না এমন ধরনের কথা)
উপদেশ অপেক্ষা উদাহরণ শ্রেয়, সন্তানকে কিছু শেখাতে চাইলে সেটা নিজে আগে করুন, আপনি নিজে সারাদিন মোবাইল নিয়ে বসে থাকবেন কিন্তু সন্তানকে বলবেন বই পড়তে, ফলাফল শূন্য। অনেক বাবা-মা সন্তানকে পড়াতে গিয়ে বলেন ছোটবেলায় আমরা অনেক পড়েছি, এখন তোমরা পড়ো! আপনার ছোটবেলা আপনার সন্তান দেখেনি কিন্তু, মাথায় রাখবেন।
ধর্মীয় শিক্ষা দিতে চাইলে অবশ্যই ছোট বেলা থেকে শুরু করতে হবে এবং নিজ বাসায় অনুশীলন থাকতে হবে ধর্মীয় আচার, রীতিনীতির। যেমন- আপনি নিজে নামাজ কালাম পড়েন না, কিন্তু সন্তানকে ইসলামী স্কুলে দিয়েছেন বা বাসায় হুজুর রেখেছেন ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য, কোনো লাভ নেই। আপনার সন্তান বড় হয়ে আপনাকে খুবই অপছন্দ করবে এবং আপনার কোনো উপদেশই শুনবে না।
পড়াশোনা নিয়ে কোনো তুলনা বা অতিরিক্ত আশা না করা বাঞ্চনীয়, সন্তানের ভেতরটা মরে যায়। বরং বোঝার চেষ্টা করুন সে আসলে কী বিষয়ে পড়তে চায়, বা ফলাফল খারাপ হলে কেন হচ্ছে। ক্লাসে পিছিয়ে থাকলে কারণ কি? এসব অনুসন্ধান না করে যদি তিরস্কার করেন। একই তিরস্কার আপনার ভাগ্যেও আছে একটু আগে বা পরে। মনে রাখবেন জীবনটা তার, আপনার বাবা-মা এমন করলে আপনার কেমন লাগতো।
দুনিয়ার যত স্বর আছে তার মাঝে প্রশংসার স্বর সবচেয়ে মধুর। সন্তানের প্রশংসা করুন, তাকে তার পজিটিভ দিকগুলো নিয়ে বাহবা দিন। সন্তানের কথা শুনুন। মূল্যায়ন করুন, গুরুত্ব দিন, আপনিও গুরুত্ব পাবেন জীবনের কোনো না কোনো সময়।
ঘরের কাজে উৎসাহ দিন এজন্য ছোটখাট উপহারের ঘোষণা দিতে পারেন যেমন কেউ যদি নিজের ঘর পরিষ্কার করে বা নিজের কাপড় গুছিয়ে রাখে বা নিজের থালা বাটি ধুয়ে রাখে বা গাছে পানি দেয় তাহলে তাকে কোনো উপহার বা কিছু অর্থ দিতে পারেন। এতে সন্তানদের গৃহস্থালি কাজের প্রতি অনীহা আসে না, উৎসাহ থাকে।
মানুষ মাত্রই ভুল হয়, কেউ ফেরেস্তা নই।
সন্তানরাও ভুল করে, ভুল করলে সন্তানদের তিরস্কার বা কঠিন শাস্তি না দিয়ে তাদের নিয়ে বসুন, বোঝার চেষ্টা করুন কেন এই ভুল হলো। তার ব্যাখ্যা শুনুন, ভুল সম্পর্কে সে লজ্জিত নাকি নির্বিকার সেটা পর্যবেক্ষণ করুন। দরকার হলে শাস্তিও দিতে পারেন তবে তা যেন শারীরিক প্রহার না হয়। শাস্তি দেওয়ার আগে সন্তানের বয়স ও সেই শাস্তি তার মনো জগৎতে কি প্রভাব ফেলবে সেটা চিন্তা করতে হবে।
দুনিয়ার কেউ উপদেশ শুনতে পছন্দ করে না, উপদেশ দিতে পছন্দ করে, কিন্তু সবাই ভালো কিছু দেখলে শেখে, অনুসরণ করে। সুতরাং সন্তানের মাঝে যা দেখতে চান, নিজেকেও ঠিক তেমন রোল মডেল হিসেবে তৈরি করুন, আপনার সন্তান আপনার ভালোটা দেখে শিখে যাবে। যেমন আপনি সবসময় বলেন সদা সত্য বলবে, কিন্তু আপনি নিজে মিথ্যা বলেন। আর ভাবছেন সন্তান সত্য বলবে! দুঃখিত, অরণ্যে রোদন। আগে নিজে সত্য বলা শিখুন।
পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু কি জানেন?
সময়, জ্বি শুধুই সময়। আপনার জীবনকাল কিছু সময়ের সমষ্টি মাত্র, সময়ের ভান্ডার থেকে যেমন সময় ব্যয় করবেন ঠিক তেমনই ফেরত পাবেন। আজ আপনি খুবই ব্যস্ত চাকরি, ব্যবসা, আত্মীয়, পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। ভাবছেন সন্তানদের সেরা স্কুল, সেরা শিক্ষক, ব্র্যান্ডের জামা-কাপড়, গেমস, খেলনা দিয়েছেন, যখন যা আবদার কিনে দিচ্ছেন। আর কি চায়?
এখন আপনি যা চান তাই হবে। তাহলে ভুল সবই ভুল। এই জীবনের পাতায় পাতায় যা ভেবেছেন ভুল। সন্তানেরা বড় হয়ে আপনাকেও সময় দেবে না। আপনার মতোই সব প্রয়োজন টাকা দিয়ে সারবে।
সর্বোপরি বাসার পরিবেশ স্বাভাবিক থাকতে হবে। গুমোট, সারাক্ষণ ঝগড়া ঝাটি, কড়া শাসন, পারস্পরিক অশ্রদ্ধা এমন পরিবেশ সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশের অন্তরায়।
সন্তানরা চাপা কষ্ট নিয়ে বড় হয়। নিজেদের বিকশিত করতে পারে না। মন:কষ্টে ভুগতে ভুগতে অনেকে বিপথে যায়। মা-বাবার পারস্পরিক সম্পর্কে সমস্যা থাকতে পারে। এজন্য সন্তানদের জিম্মি করা খুবই অন্যায়। একসঙ্গে থাকতে গিয়ে তারা সন্তানের জীবন দুর্বিসহ, অসহনীয় কষ্টের করে তোলে। এসব ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে যাওয়াই তাদের এবং সন্তানের জন্য মঙ্গল। অনেকেই ভাবেন এতে হয়তো সন্তানরা কষ্ট পায়, একদমই ভুল ধারণা। সন্তানের স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা মা-বাবা দুজনেরই দায়িত্ব।
সঠিকভাবে সন্তান লালন-পালন আসলে একটি বাক্য দিয়ে বোঝানো কঠিন, এরপরেও যদি বোঝাতে যাই তাহলে সেটা হবে। ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন’
বাক্যটির মতো নির্মম সত্য। জ্বি…সত্য।
অপত্য ধারণ কোনো সহজ বিষয় নয়, আবার কোনো পার্থিব আশা না করে পিতা-মাতা শুধু ত্যাগ করে যাবেন, কিছুই পাবেন না, তাও কিন্তু নয়। পিতা-মাতার জন্য সন্তানদেরও অনেক কিছু করণীয় আছে এবং সন্তানরা তা করেও যদি তারা সু-সন্তান হয়ে গড়ে ওঠে।
তবে যুগ যুগ ধরে অনেক অনেক মা-বাবা কোনো কিছু না বুঝেই স্রোতের ভিড়ে গা ভাসিয়ে সন্তান প্রতিপালন করে যান সমাজের বা পরিবারের সংখ্যাগরিষ্ঠদের অনুসরণ করে যা ভয়ানক একটি ভুল পদ্ধতি। এর ফলে অনেক সন্তানরা নিজ বাড়িতেই বিভীষিকাময় জীবনযাপন করে।
সঠিকভাবে সন্তান প্রতিপালন করা খুবই কঠিন একটি গুরু দায়িত্ব, যেখানে অবশ্যই আপনি আপনার নিজস্ব বুদ্ধি, বিবেচনা এবং শিক্ষা কাজে লাগাবেন এবং সন্তানের স্বভাব ও মন বুঝে আপনার ব্যবহার প্রয়োগ করবেন। ঢালাওভাবে একই তরিকা সব সন্তানের জন্য নয়। প্রতিটা মানুষ আলাদা এবং তাদের অধিকার আছে নিজ গৃহে স্বার্থহীনভাবে ভালো ব্যবহার পাওয়ার।
সৃষ্টিকর্তা আপনাকে আমানত দিয়েছেন ঠিকভাবে প্রতিপালন করার, যেখানে অবশ্যই বিশাল নেয়ামতও আছে। বাবা-মা’র জন্য শ্রেষ্ঠ দোয়ায় সেই এহসান বর্ণিত আছে এবং কোনো কারণে বাবা-মা হিসেবে সন্তান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে তার ফায়সালা ও বর্ণিত আছে সুনিপুণভাবে।
পিতা-মাতার জন্য অনেক অনেক দোয়া আছে। এত এত দোয়ার মাঝে মা-বাবার জন্য শ্রেষ্ঠ দোয়া কোনটা?
আমরা সকলেই জানি, বহুবার পঠিত বিখ্যাত সেই দোয়া…
‘রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানী ছগীরা।’ অর্থ: হে আল্লাহ আমাদের পিতা-মাতাকে সেইভাবেই রাখো, শিশু কালে তারা যেভাবে আমাদের মায়া মমতায় আগলে রেখেছিলো। সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত-২৪।
আমরা সবাই অনেকবার পড়েছি এই দোয়া, কিন্তু বোঝার কি চেষ্টা করেছি এই ছোট্ট একটি লাইনে কত কথা লুকায়িতভাবে বর্ণিত হয়েছে? এজন্যই প্রতিটি বাণীর ক্ষেত্রে সঠিক শানে নজুল বা ভাব সম্প্রসারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আচ্ছা, যেসব বাবা-মা তাদের সন্তানদের শিশুকালে মায়া-মমতা, ভালোবাসায় আগলে রাখেননি, উল্টো সারাক্ষণ তুলনা, তিরস্কার, বকাঝকা, লিঙ্গবৈষম্য ও প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন তাদের সন্তানেরা যখন উপরোক্ত দোয়াটি তাদের পিতামাতার জন্য পড়বেন, তখন কি হবে ভেবে দেখেছেন?
সন্তানদের সঙ্গে পিতা-মাতা হিসেবে শৈশবে যে ব্যবহার করেছেন, বয়সকালে কিন্তু তাই ফেরত পাবেন তখন, যখন তাদের সন্তানেরা এই দোয়াটি পড়বেন।
মায়া করলে মায়া, তিরস্কার করলে তিরস্কার, তুলনা করলে তুলনাই ফেরত আসবে আপনার জীবনেও।
দোয়াটিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে ‘হে আল্লাহ আমাদের পিতামাতাকে সেইভাবেই রাখো, শিশুকালে তারা যেভাবে আমাদের মায়া মমতায় আগলে রেখেছিল।’
আবার যেসব পিতা-মাতা আসলেই মায়া, মমতা, ভালোবাসায় বড় করেছেন কিন্তু সন্তানেরা তাদের প্রতি সুবিচার করেনি, বরং নাফরমমানি করেছেন, সেসব সন্তান ও যখন উপরোক্ত দোয়াটি পাঠ করবেন, তাদের পিতা-মাতা কিন্তু ন্যায়-বিচারই পাবেন, দোয়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী।
আমরা কি তাহলে বুঝতে পারছি, কেন এত এত দোয়ার মাঝে এই দোয়াটাই পিতা-মাতার জন্য শ্রেষ্ঠ? আমরা জানি, সৃষ্টিকর্তা দেনা-পাওনায় সুবিচারক এবং ‘নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।’ সূরা: আল-ইমরান, আয়াত ৯।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুক এবং দায়িত্ব বোঝার তৌফিক দিক।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :