ডেস্ক সংবাদ : নাম জারমান শেখ। বয়স ১১ বছর। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর অভাবি সংসারের হাল ধরতে এই বয়সেই নামতে হয়েছে পথে। কলসি বাজিয়ে খালি গলায় গান গেয়ে বকশিস হিসেবে যা জোটে তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ময়না গ্রামে জারমানের বাড়ি। সংসারে উপার্জনের কেউ নেই। বছর পাঁচেক আগে বাবা মোকসেদ শেখ প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। বড় ভাই ফরমান শেখ বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। মা-ভাই-বোনের খোঁজ নেন না। আরেক ভাই আরমান (১৪) শ্রমিকের কাজ করে যা পান তা দিয়ে চলে না সংসার। তাই সংসারের হাল ধরতে পেটের দায়ে পথে-ঘাটে গান গেয়ে লোকজনকে বিনোদন দেন কিশোর জারমান শেখ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জারমানের মা অসুস্থ। সংসারের হাল ধরতেই তার এ পথে নামা। কয়েশো গান তার মুখস্থ। গানের সময় প্রয়োজন হয় না বাদ্যযন্ত্রের। কেবল লাগে একটা কলসি। পথে, ঘাটে, হাটে যে কারও অনুরোধে গান শোনায় সে। কসলির বাজনা আর খালি গলায় সুরেলা গান শুনে জড়ো হন আশপাশের লোকজন। অনেকেই তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে বকশিস হিসেবে বিশ, পঞ্চাশ, একশো টাকা পর্যন্ত দেন।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদরে রেল স্টেশনে গান গাওয়ার সময় জারমানের সঙ্গে দেখা হয়। ‘আমার সোনা বন্ধু রে তুমি কোথায় রইলা রে, হায়রে সোনা বন্ধে কী দোষে কান্দায়লি, ও আমি আর কতকাল থাকবো রাধে গো, মা বিনে বান্ধব নাইরে কেউ এই দুনিয়ায়,’ এমন কয়েকটি গান গাওয়ার মাঝে কথা হয় তার সঙ্গে।
জারমান শেখ বলে, আমাদের জমি-জমা নেই। সংসার দেখারও কেউ নেই। আমার বাবা ছিলেন দিনমজুর। অসুস্থ হয়ে ঘরে থাকা অবস্থায় কাইজায় প্রতিপক্ষের হাতে বাড়ির ওপরই খুন হয়। বড় ভাই বিয়ে করে অন্যত্র সংসার পেতেছে। খোঁজ-খবর নেয় না। আরেক ভাই সেও ছোট। ছোট একটি বোন আছে। মা অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারে না। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। করোনালে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। কোনো কাজকর্ম না পেয়ে পেটের দায়ে গান গেয়ে মানুষকে বিনোদন দিই। এ থেকে যা পাই তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।
গান শুনে মুগ্ধ হয়ে অনেকের মতো খুশি হয়ে ১০০ টাকা বকশিস দেন ছোলনা গ্রামের লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, প্রায় দিন সন্ধ্যার পরে রেল স্টেশন এলাকায় জারমান শেখ কলসি বাজিয়ে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের গান গেয়ে মানুষদের বিনোদন দেয়। কণ্ঠ সুমধুর হওয়ায় এরই মধ্যে অনেকের মন কেড়েছে এই ক্ষুদে শিল্পী। তার সুরেলা গলায় গান শুনে মানুষ মুগ্ধ হয়। তার গলায় জাদু আছে। যে কেউ তার গানে মুগ্ধ হবে। সে ভালো কোনো সুযোগ পেলে একদিন বড় শিল্পী হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, প্রায়ই সন্ধ্যার পরে এ এলাকায় এসে গান গেয়ে জারমান মানুষকে বিনোদন দেয়। কলসির বাদ্যে, সুরেলা কণ্ঠ শুনে মানুষজনের ভিড় জমে। মানুষ মুগ্ধ হয়ে তার গান শোনে। এতে আমার দোকানের বেচাকেনাও ভালো হয়।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আমীর চারু বলেন, বিভিন্ন সময়ে রেল স্টেশন এলাকায় দেখা যায় বাদ্যযন্ত্র ছাড়া চায়ের দোকানে বসে গান পরিবেশন করছে জারমান। আমি মনে করি, ভালো তালিম পেলে গানে আরও ভালো করবে ছেলেটি।
এ বিষয়ে ময়না ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, তার গান শুনেছি। ছেলেটি ভালো গান গায়। তাদের অভাবি সংসার। ছোট ছেলেটি গান গেয়েই তাদের সংসার চালায়। তার যে গানের গলা তাতে ভালো কোনো সুযোগ পেলে ভালো গায়ক হতে পারতো। তার যে কোনো সাহায্যে আমি সাধ্যমতো সহযোগিতা করবো
।
তবে এ বিষয়ে জানতে ময়না ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হক মৃধার মোবাইলফোনে কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :