শামীম আহমেদ, বরিশাল ॥ প্রায় তিন বছর পূর্বে অবসর গ্রহণ করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের গাইনী ওটির অফিস সহায়ক আব্দুল মালেক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী মমতাজ বেগম। তারপরেও তারা কর্মস্থল ছাড়ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের প্রশ্ন। তবে একটি সূত্র জানিয়েছেন, হাসপাতালের পঞ্চম তলার গাইনী ওটির ইনর্চাজ এবং ওয়ার্ড মাস্টারকে ম্যানেজ করেই ওটিতে রয়েছে মালেক ও মমতাজসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত ব্যক্তি। হাসপাতালের কাগজপত্রে আব্দুল মালেক ও মমতাজ বেগম অবসরে থাকলেও বর্তমানে তারা দুইজনেই ডিউটি করছেন হাসপাতালের গাইনী ওটিতে। অভিযোগ রয়েছে, রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে প্রতিদিন প্রত্যেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। বিষয়টি নিয়ে কঠোর কোন ভূমিকার নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোগীর সন্তান প্রসব করার পর স্বজনদের কাছে নবজাতক বাচ্চা হস্তান্তর করার সময় মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে স্বজনদের কাছ থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা দাবি করেন সাবেক অফিস সহায়ক আব্দু মালেক ও মমতাজ বেগমসহ ওটিতে থাকা বহিরাগতরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা নেয়ায় গত ১৬ আগস্ট রাতে হাসপাতালের পঞ্চম তলার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে বসে সিনিয়র স্টাফ নার্স মমতাজ বেগমসহ ডিউটিরত নার্সরা রোগীদের পক্ষে প্রতিবাদ করেন। এতে বহিরাগত বিনা বেগম ও স্বর্না বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে স্টাফ নার্সদের লাঞ্ছিত করেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মচারীরা জানান, সরকারী কোন অনুমতি ছাড়া এক্সটা ভাবে কি ভাবে মালেকের মেয়ে খুকু মনি, মমতাজের নাতী স্বর্না বেগম, ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালামের আত্ময়ী আব্দুর আজিজ, তহমিনা আক্তারের ভাইয়ের ছেলে নোবেল, মোসলেমের মেয়ে বিনা বেগম ও সোনিয়াসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত লোক বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন ওটিতে। তারা আরো বলেন, এক্সটা লোক আর স্বেচ্ছাসেবীর নামে যারা হাসপাতালে কাজ করছেন তাদের হাতে প্রতিদিনই রোগীর স্বজনরা নানা ধরনের হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী মমতাজ বেগম বলেন, আমি অবসরে গিয়েছি এটা সত্য। তবে এখন পর্যন্ত এলপিআরের টাকা পাইনি। এলপিআরের টাকা পেলে হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দিবো। রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোন রোগীকে জিম্মি করে টাকা নেই না। তবে চা খাওয়ার জন্য রোগীর স্বজনরা আমাদের খুশি হয়ে কিছু টাকা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালের সহকারীর পরিচালক তাকে (মমতাজ) ডিউটি করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অবসরে যাওয়া অফিস সহায়ক আব্দুল মালেক বলেন, অবসরে যাওয়ার পরেও আমি কর্মস্থলে রয়েছি এটা সম্পূর্ন বেআইনী। তবে আমি পুরানো লোক বিধায় গাইনি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ খুরশীদ জাহান আমাকে রেখেছেন। তারা আমাকে চলে যেতে বললে আমি চলে যাবো।
গাইনী ওটির ইনর্চাজ বেবী নাজমিন বলেন, অফিস সহায়ক আব্দুল মালেক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী মমতাজ বেগম অবসরে গিয়েছে এটা সত্য। তবে অবসরে যাওয়ার পরে কোন কর্মচারী তার কর্মস্থলে থাকতে পারবে না, এটা সরকারী নিয়ম। কিন্তু তারা কিভাবে কাদের মাধ্যমে ওটিতে কাজ করছে সেটা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করার জন্য একটি লিখিত আদেশ দিয়েছিলেন। পরে তারা হাসপাতালের এডি স্যারকে বলে নাকি কাজ করার অনুমতি নিয়েছে বলে শুনেছি।
গাইনি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ খুরশীদ জাহান বেগম বলেন, আমাদের জনবল সংকট থাকায় অবসরে যাওয়া পুরানো দুইজন লোককে পরিচালক স্যারকে বলে গাইনী ওটিতে রাখা হয়েছে। তবে স্বেচ্ছাসেবীরা রোগীদের জিম্মি করে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে এটা সত্য। কিছুদিন আগে আমি দুইজনকে হাতে নাতে ধরেছি এবং রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করেছি।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবীর নামে যারা কাজ করছে তারা রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে এটা সত্য। তবে আমাদের জনবল সংকট থাকার কারনে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, অবসরে যাওয়ার পরেও যারা কর্মস্থলে রয়েছে তারা অবৈধভাবে রয়েছে। তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করার জন্য বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বলা হয়েছে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি আরও বলেন, বহিরাগতদের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :