নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোলায় রঙিন তরমুজ চাষে কৃষকের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। হলুদ, কালো ও সবুজ রঙের গ্রীস্মকালীন এ তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রথমদিকে স্বল্প আকারে চাষ হলেও বর্তমানে এর আবাদের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ৪০ হেক্টর জমিতে ব্লাক বেবি, ব্লাক কিং, ইউলো বার্ড ও তৃিপ্ত জাতের রসালো এ ফলের আবাদ হয়েছে জেলায়। নতুন এ জাতের কদর ও দাম বেশি থাকায় লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। ফলনও হয়েছে ভালো। মিষ্টি স্বাদের এ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমাদের দেশে মূলত রবি মৌসুমে তরমুজের চাষ হয়। এটাই সাধারণত তরমুজের সিজন হিসেবে মনে করা হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অফ-সিজনের বিভিন্ন উন্নত জাতের রঙিন তরমুজ চাষ হচ্ছে। দিন দিন জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। আর সিজনের তরমুজের চেয়ে এর দাম কয়েকগুণ বেশি পাওয়া যায়। বর্তমানে জেলায় এর কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।
চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ওমর ফারুক বলেন, তার উপজেলায় নতুন এ জাতের তরমুজ সবচে বেশি আবাদ হয়েছে। এসব তরমুজের মধ্যে ব্লাক কিং হলো বাইরের আবরণ কালো এবং ভেতরে লাল। আরেকটি হলো তৃপ্তি জাত, যার বাইরে পুরোটাই হলুদ ও ভেতরে লাল। এ ছাড়া ইউলো বার্ড জাত হলো বাইরে সবুজ আবরণ ও ভেতরে হলুদ। এর মধ্যে তৃপ্তি ও ইউলো বার্ড জাতের চাহিদা সবচে বেশি। এর কেজি প্রায় ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এসব তরমুজ প্রায় ৩ কেজি পর্যন্ত হয় এবং দেখতেও বেশ সুন্দর। অনেক কৃষক আগামীতে এটা চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েতউল্লাহ বলেন, জেলার লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় অসময়ের রঙিন তরমুজ চাষ চলছে। ৫০ শতক জমির অনকূলে কৃষকদের জন্য ৮টি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ জাতটা জুলাইয়ের শেষের দিকে আবাদ করা হয়। সাধারণত ৬০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে ফলন আসে। এ তরমুজ চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড়শ কৃষককে। প্রতিবছরই আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। আগামীতে এ তরমুজ চাষ আরও সম্প্রসারণের কথা জানান তিনি।
কৃষকরা জানায়, অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে মাঁচা পদ্ধতিতে এ তরমুজের চাষ করা হয়। জলাবদ্ধতা বা পানি জমতে পারবেনা এমন জমি এটা রোপণের প্রধান শর্ত। আবার ট্রেতেও অনেকে মালচিং পদ্ধতিতে এর আবাদ করছে। চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ গ্রামের চাষি আক্তার হোসেন ৪০ শতক জমিতে রঙিন তরমুজের চাষ করছেন। কৃষি অফিসের প্রদর্শনীর মাধ্যমে পেয়েছেন বীজ, সারসহ সকল কারিগরি প্রশিক্ষণ।
তিনি জানান, তিনি ৪৮০টি চারা রোপণ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। প্রায় এক হাজার কেজি তরমুজ বিক্রির উপযোগী তার। কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি করবেন। চাহিদা বেশি থাকায় পাইকাররা আগাম বায়না করে রেখেছেন। সামনের দিনে আরও বেশি জমিতে এ তরমুজ চাষের পরিকল্পনা তার।
একই উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার অপর কৃষক কামাল হোসেন বলেন, অসময়ের রঙিন এ তরমুজের চাহিদা বাজারে খুব বেশি। তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে এর চাষ করেছেন। ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। আরও তরমুজ বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।
চরমানিকা ইউনিয়নের তরমুজ চাষি মিজান ফরাজি জানান, অনেক কৃষকই এই জাত আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রতিদিনই তার খামারের রঙিন তরমুজ ক্ষেতে ভিড় করেন স্থানীয়রা। তরমুজ হলো লবনাক্ততা সহিষ্ণু একটি জাত। যেহেতু এটি একটি সমুদ্র উপক’ল এলাকা। তাই এখানে এর ব্যাপক চাষে কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়ন করা সম্ভব। লালমোহনের তরমুজ চাষি লিয়াকত হোসেন বলেন, সিজনের দেশি তরমুজের মত এটার ফলন অত বেশি হয় না। তবে দাম বেশি পাওয়ায় লাভটা বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আরও জানান, নতুন এ জাতের তরমুজ প্রতি হেক্টরে ৩০-৪০ মেট্রিকটন উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় ১৩০০ মেট্রিকটন রঙিন তরমুজ উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছেন। সব মিলিয়ে রঙিন এ তরমুজ চাষে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :