ক্যারিয়ার শেষ করার ঝুঁকিতে যাবেন না, কক্সবাজারের ডিসিকে হাইকোর্ট


Barisal Crime Trace -GF প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৯, ২০২২, ৬:৫২ অপরাহ্ণ /
ক্যারিয়ার শেষ করার ঝুঁকিতে যাবেন না, কক্সবাজারের ডিসিকে হাইকোর্ট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : উচ্চ আদালতের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন না করায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মামুনুর রশীদকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন না করায় ডিসিকে সতর্ক করলেন আদালত।

 

 

হাইকোর্ট বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় আপনার পারফরমেন্স শুধু জিরো না, নেগেটিভও। বারবার বলার পরও আপনি আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেননি। আদালতের আদেশ মান্য করুন, আদেশ না মানলে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আমরা মনে করি আপনি এই ঝুঁকিতে যাবেন না।

 

বুধবার (১৯ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ কক্সবাজারের ডিসিকে এসব কথা বলেন।

 

 

আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। জেলা প্রশাসকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

 

 

শুনানির শুরুতে কক্সবাজারের ডিসির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকিরকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, আমরা কখনও ঢালাওভাবে কারও বিরুদ্ধে কনটেম্পট (আদালত অবমাননা) করি না। তাকে অনেকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে আদালতের মনোভাব জানিয়েছেন। এরপরও তিনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মানেননি। এ কারণে তলব করেছি।

 

 

ডিসিকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে সারাবিশ্বের মানুষ চেনে। আপনি সেই কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় ভূমিকা রাখুন, আপনাকেও সারাবিশ্বের মানুষ চিনবে। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে কাজে লাগিয়ে আপনি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করুন। আদালতের আদেশ মানতেই হবে। না মানার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান হাইকোর্ট।

 

আদালত আরও বলেন, উচ্ছেদ করে আমরা তাদের বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে বলছি না। আপনি উচ্ছেদের বিষয়ে সুন্দর ব্যবস্থাপনা করুন। মানুষ আপনাকে মনে রাখবে। আমরা প্রতিদিন গণমাধ্যম খুলে দেখি আপনি (ডিসি) কী করছেন। কিন্তু আপনার পারফরমেন্স শুধু জিরোই নয়, নেগেটিভও।

 

 

এ সময় এজলাসকক্ষে উপস্থিত কক্সবাজারের ডিসি আদালতকে বলেন, আমি কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। এখন আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করবো।

 

 

তখন আদালত বলেন, শুধু করবো বললে হবে না। আপনাকে করতেই হবে। আদালতের আদেশ না মানলে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আপনি এই ঝুঁকিতে যাবেন না।

 

 

তখন ডিসি মামনুর রশিদ বলেন, আমি আদালতের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। যদিও তিনি এর আগে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। এর ফলে এখন ডিসিকে আর আপাতত আদালতে আসতে হবে না।

 

 

এসময় তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৯ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন হাইকোর্ট।

 

 

এর আগে সকালে সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে হাজির হন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি)। এ সময় আদালতের আদেশ পালন করতে না পারায় তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাও করেন।

 

 

আদেশের পর এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ গণমাধ্যমকে জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালন না করায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মামনুর রশীদকে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেছেন, আদালতের আদেশ পালন না করলে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।

 

 

এটা বলার অর্থ কী- জানতে চাইলে মনজিল মোরসেদ বলেন, যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের বিষয়ে উচ্চ আদালত কোনো আদেশ দিলে তাদের চাকরি যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আদালত ডিসিকে সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন।

 

 

এদিকে, জেলা প্রশাসক তার প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছেন, ৪১৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২৩৩টি অবৈধ স্থাপনা চেম্বার জজ আদালতের উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা উচ্ছেদ করা হয়নি।

 

 

আদালত অবমানার বিষয়ে এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্টের একই বেঞ্চ কক্সবাজারের ডিসিকে তলব করেছিলেন। সে তলব অনুযায়ী আজ তিনি হাইকোর্টে হাজির হন।

 

 

ডিসি ছাড়াও আরও চারজনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। তারা হলেন- কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফোরকান আহমেদ, টাউন প্ল্যানার তানভির হাসান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ও পৌরসভার মেয়র মজিবর রহমান।

 

 

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় আদালত অবমাননার আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।

 

 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে ২০১১ সালের ৭ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের আলোকে কয়েক দফা নির্দেশনা দিলেও তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ কারণে ফের আদালত অবমনানার অভিযোগ করা হয়।