স্টাফ রিপোর্টার, কলাপাড়া : দারিদ্র ঠেকাতে পারেনি অদম্য মেধাবী ইমরান হোসেনের পথচলা। অভাবের সংসারে নিজে রাজমিস্ত্রির কাজ করেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে লেখাপড়া করছেন তিনি।
ইমরান হোসেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রশিদ মাঝির ছেলে। আট সন্তানের মধ্যে পঞ্চম ইমরান। পেশায় জেলে আবদুর রশিদের চার সন্তান স্কুলের গণ্ডি ফেরুতে পারেননি। পঞ্চম সন্তান ইমরান নিজের পাশাপাশি ছোট ভাই-বোনদেরও পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, ইমরান কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় এসএসসি পাশ করেন। কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন।
এ বিষয়ে ইমরান হোসেন বলেন, ১০-১২ জনের জেলে পরিবার আমাদের। তিন বেলা খাবার যোগাতে হিমশিম খান আমার বাবা। তাই আমার বড় চার ভাই-বোন লেখাপড়া করতে পারেননি। মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পর খেয়ে না খেয়ে লেখাপড়া চালিয়েছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান আমার দায়িত্ব নেন।
তিনি বলেন, কলেজে পা রাখার পরে ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব এসে পরে আমার ঘাড়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ শুরু করি দিনমজুরের। কাজ করার ফাঁকে যতটুকু সময় পেতাম ঘরের চৌকিতে বসে যেতাম বই নিয়ে। প্রথমবার কেনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ মিললো না। হতাশ হয়ে পড়ি কিন্তু হাল ছেড়ে দেইনি। দ্বিতীয়বার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ হয়৷
১ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হবে। এর আগে রাজশাহী যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক খরচটাতো অন্তত সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। যার জন্য এখন দিনমজুরের কাজ করছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিচ্ছুক্ষণ লেখাপড়া করি। সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাঁচশত টাকা দৈনিক মজুরি হিসেবে কাজ করছি।
মাকসুদুর রহমান সুমন নামের তার এক প্রতিবেশী জানান, ইমরান ছোটবেলা থেকেই শান্ত প্রকৃতির। পরিবারের সবাই জেলে পেশায় নিয়োজিত। তাই সাগরে মাছ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হতো। কেউ যদি ইমরানের দায়িত্ব নেয় তাহলে একদিন দেশের বড় ভূমিকা রাখবে এ মেধাবী ছাত্র।
কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক এম জাকির হোসেন বলেন, কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে আমরা সবসময় ইমরানের খেয়াল রেখেছি। প্রাইভেট বা কলেজে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। তার আপ্রাণ চেষ্টায় ইমরান সফল। আসা রাখি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় একদিন ওর স্বপ্ন পূরণ হবে।
কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, পারিবারিক অসচ্ছলতায় চাপা পড়ে নিষ্পেষিত হচ্ছিল ইমরানের মেধা। আমি শুধু চেষ্টা করেছি ওর পাশে থাকতে। যে কারণে ওর অক্লান্ত পরিশ্রম আর অদম্য চেষ্টা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। অদম্য চেষ্টা যে একটা মানুষকে তার স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায় তা ইমরান প্রমাণ করেছে।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :