হত্যার পর মরদেহ ওয়্যারড্রোবে, পরে রাস্তার পাশে ফেলে যান প্রেমিক


Barisal Crime Trace -GF প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৯, ২০২২, ৭:১৭ অপরাহ্ণ /
হত্যার পর মরদেহ ওয়্যারড্রোবে, পরে রাস্তার পাশে ফেলে যান প্রেমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বামী পরিত্যক্তা এক সন্তানের জননী পোশাককর্মী ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনার সঙ্গে দুই বছর ধরে পরকীয়া করে আসছিলেন এক সন্তানের জনক রাকিবুল হাসান সুমন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নেন বাসা ভাড়া। একপর্যায়ে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় প্রেমিক ও তার বন্ধুকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন সাবিনা।

 

 

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেমিক ও তার বন্ধু মিলে সাবিনাকে হত্যা করেন। পরে মরদেহ ওয়্যারড্রবে ভরে রাস্তার পাশে ফেলে যান।

 

এ ঘটনায় চারদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

 

 

বুধবার (১৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানায় গাজীপুর পিবিআই।

 

 

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার নববগ্রাম এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে ফারুক হোসেন (২৪), সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ থানার চৌবাড়ি এলাকার শাহ আলম আকন্দের ছেলে শাহরিয়ার আকন্দ (১৯), শেরপুরের নকলা থানার মাওড়গা গ্রামের মর্তুজা আলীর ছেলে রাকিবুল হাসান সুমন (২৪) ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার ধনপুর গ্রামের সুনু মিয়ার ছেলে নাঈম (২৭)।

 

 

নিহত ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনা (৩২) কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার আয়নাল হকের মেয়ে।

 

পিবিআই জানায়, রাকিবুল হাসানের সঙ্গে দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল স্বামী পরিত্যক্তা সাবিনার। তারা গাজীপুর মহানগরীর সাইনবোর্ড এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। একপর্যায়ে রাকিবুল হাসান সাবিনাকে ছেড়ে স্ত্রী-সন্তানের কাছে চলে যান। এতে সাবিনা প্রায় সময় রাকিবুল হাসানকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতেন এবং বিয়ের জন্য চাপ দিতেন।

 

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় এলাকার স্থানীয় লোকজন দিয়ে প্রেমিক রাকিবুলকে ধরে এনে মারধর করান সাবিনা। এতে ক্ষুব্ধ হন রাকিবুল। পরে রাকিবুল ও তার বন্ধু নাঈম সাবিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৩ অক্টোবর সাবিনাকে নাঈমের গাজীপুর মহানগরীর বাসন সড়কের ভাড়া বাসায় ডেকে আনেন প্রেমিক রাকিবুল। পরে তারা শারীরিক সম্পর্ক করেন। ঘটনার দিন সাবিনা বিয়ের জন্য চাপ দিলে প্রেমিক রাকিবুল হাসান এবং তার বন্ধু নাঈম সাবিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে সাবিনা তাদের ফাঁসানোর হুমকি দেন।

 

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নাঈম সাবিনার হাত চেপে ধরেন এবং রাকিবুল গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বাসন সড়কের একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে ১২ হাজার টাকায় কিস্তিতে একটি ওয়্যারড্রোব কিনে এনে তার ভেতরে সাবিনার মরদেহ রেখে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

 

মরদেহ সরানোর জন্য নাঈম তার ভায়রা ভাই ফারুক হোসেনকে পিকআপ নিয়ে আসতে বলেন। রাকিবুল ও তার বন্ধু নাঈম মরদেহ সরানোর কাজে সহযোগিতা করার জন্য শাহরিয়ার আকন্দ নামের তাদের আরেক বন্ধুকে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে তারা চারজন মিলে মরদেহ ভর্তি ওয়্যারড্রোব পিকআপে ওঠান।

 

পিবিআই আরও জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী মরদেহ ভর্তি ওয়্যারড্রোবটি পিকআপে করে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার বি কে বাড়ী এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে তারা চলে আসেন। সংবাদ পেয়ে ওই স্থানে গিয়ে ভাই জসিম উদ্দিন তার বোনকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

 

এ ঘটনায় জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক এ কে এম রেজাউল করিম জানান, গ্রেফতার আসামিদের গাজীপুর আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।