মো.আরিফুল ইসলাম,বাউফল: টেকসই বাধ ও পরিকল্পিত রক্ষা ব্যবস্থার অভাব আর অস্বাভাবিক জোয়ারের ধাক্কায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলজুড়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলজুড়ে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার সকাল থেকে জোয়ারের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চন্দ্রদ্বীপ, চরকালাইয়া, শৌলা, নিমদি ও কাছিপাড়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রামীণ জনপদ।
বিশেষ করে নদীবেষ্টিত ইউনিয়ন চন্দ্রদ্বীপের দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরাংশে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। দক্ষিণ চরওয়াডেলের খানকা বাজার থেকে হাওলাদার বাড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ কাঁচা রাস্তাটি একাধিক স্থানে ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। পশ্চিমে বাতির খাল থেকে ধানেচ রাড়ির বাড়ি পর্যন্ত ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে।
উত্তরে আমির বেপারীর বাড়ি থেকে মমিন বেপারীর বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তার উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হয়েছে। মাস্টার বাড়ি থেকে পশ্চিম মিয়াজান বাজার পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা ভেঙে পড়েছে। চর রায়েসাহেব খেয়াঘাট এলাকা সম্পূর্ণ প্লাবিত।
স্থানীয় বাসিন্দা জালাল গাজী বলেন,প্রতি বছর বর্ষায় এমনটা হয়। সরকার চাইলেই এর স্থায়ী সমাধান দিতে পারে, কিন্তু সদিচ্ছার অভাবেই কিছু হচ্ছে না। আমরা যারা নদীর পাড়ে থাকি, তাদের জন্য পাইলিং, ব্লক আর বেরিবাঁধের বিকল্প নেই। না হলে প্রতি বছরই ভেসে যেতে হবে।
একই রকম অভিযোগ করে শাহআলম রাঢ়ি বলেন,অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে প্রতি বছরই আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না, বই-খাতা ভিজে যায়। খাবার পানি, চলাচল সব কিছুই অচল হয়ে যায়। প্রতিটি দিন যেন একেকটা যুদ্ধ।
এছাড়াও চরকালাইয়া, শৌলা, নিমদি ও কাছিপাড়া ইউনিয়নের গোপালিয়া, বাহের চর, কারখানা এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব অঞ্চলের নিচু এলাকায় বসবাসকারী শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এবিষয়ে কাছিপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী রুবেল বরিশাল ক্রাইম ট্রেস"কে বলেন,প্রতি বছর পানি বাড়লেই গোপালিয়া, বাহের চর, কারখানাসহ পুরো নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট ভেঙে পড়েছে, চিকিৎসা বা জরুরি সেবা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা বহুবার বলেছি, কিন্তু এখনো কোনো টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু সহানুভূতির চেয়ে স্থায়ী বাঁধ চাই।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল বসার বরিশাল ক্রাইম ট্রেস"কে বলেন,এ সময় নদীর পানি এমনিতেই বাড়ে, তবে এবার অনেক বেশি। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ ও রাস্তাগুলো মেরামত না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বরিশাল ক্রাইম ট্রেস"কে বলেন, নিম্নচাপের ফলে প্লাবিত এলাকার খোঁজ খবর নিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে সরকারি অনুদান দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বন্যা কবলিত নদী তীরবর্তী এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং এবিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই জোয়ার ও ঝোড়ো হাওয়া ২৫ জুলাই সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.