
নিজস্ব প্রতিবেদক: বরগুনার বেতাগীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ছাত্রাবাসটি এখন বখাটে আর মাদকসেবীদের দখলে। বেতাগী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয় ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এ ছাত্রাবাসটি এখন খুদে শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কারণ।
রাতদিন সেখানে বসে চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। রয়েছে সাপের ও মশামাছির উপদ্রব। এতে অনিরাপত্তায় ভুগছে খুদে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বেতাগী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে সকালে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেতাগী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে ওয়াশ ব্লকঘেষে ৫০ বছর আগের নির্মিত বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের বাহিরে টিনসেডের তৎকালীণ ছাত্রাবাসটি বর্তমানে পরিত্যাক্ত জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরে রয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, ১৯৪১-৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এ ঘরটি ছাত্রাবাস ছিলো এখন কোন কাজে আসছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, দরজা-জানালাবিহীন টিনের এই ছাত্রাবাসটি জ¦রাজীর্ণ ও ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। পুরনো টিন ও কাঠ খসে পড়ছে। বেড়াজুড়ে বেয়ে উঠছে লতাপাতা। দিন দিন সব কিছু খুলে নিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। স্থাপনাটির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের খালি কৌটা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের তথ্যমতে জনাগেছে, ঘরটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় এরই আগে সহকারি কমিশনারের (ভূমি) নেতেৃত্বে থানা পুলিশ একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে একাধিক মাদকসেবীদের আটক করে জেল-জরিমানা ও অর্থদন্ড দেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওয়াহিদুর রহমান বরিশাল ক্রাইম ট্রেস ডটকম’কে বলেন, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠটি ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে মডেল প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয়ে মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে অবদান ও উপজেলাবাসীর সুনাম ধরে রাখলেও বর্তমানে টিনের পরিত্যাক্ত ছাত্রাবাসটি মাদকের আড্ডাখানা ও সাপের উপদ্রব্য ক্ষুদে শিক্ষার্থীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্ট শিশু, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে খুব দ্রুত টিনের এই ঘরটি অপসারণের জন্য সবার এগিয়ে আসা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যালয়ের তথ্যমতে, দেশের উপকূলীয় জনপদের শীর্ষ এ বিদ্যাপীঠে বর্তমানে ৫০১ জন শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। এর মধ্যে ২০০৫ জন ছাত্র ও ২৯৬ জন ছাত্রী রয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বরিশাল ক্রাইম ট্রেস ডটকম’কে বলেন, পরিত্যক্ত ঘরটি পেরিয়ে আমাদের ওয়াশ ব্লকে বাথরুমে যেতে ভয় কাজ করে, তবুও কেউ কর্ণপাত করছে না।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সহকারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনির হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হরেকৃষ্ণ অধিকারী, বিশেষ অতিথি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওয়াহিদুর রহমান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বেতাগী বালিকা বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীন, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান খান, উপজেলা জামাতের সেক্রেটারি প্রভাষক মো. শাহাদাত হোসেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এসএম নুরুল ইসলাম পান্না, বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম সিদ্দিকী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির উপজেলা সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু, বেতাগী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার খান, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মো. মাইনুল ইসলাম, পৌর জামাতের সহ-সভাপতি হাফেজ মাহাবুবুর রহমান, উপজেলা যুবদলের সাবেক আহবায়ক মিজানুর রহমান ডব্লিউ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার, বেতাগী পৌরসভার প্রতিনিধি সাবিনা ইয়াস মিন, ছাত্র প্রতিনিধি ইমরান হোসেন, বেতাগী প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা ও সম্মানিত ব্যক্তিরা।
এসময় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ছাত্রাবাসটি বখাটে আর মাদকসেবীদের দখলে থাকায় এটির কারণে শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে ও আতঙ্কে থাকায় টিনের পুরানো ঘরটি ভেঙে ফেলতে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বেতাগী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জমিদাতা আব্দুস সত্তার বরিশাল ক্রাইম ট্রেস ডটকম’কে বলেন,স্কুল সংলগ্ন বাড়ী হওয়ার সুবাদে পরিত্যক্ত ও নির্জনে থাকা টিনের এ ঘরটিতে বখাটে ও মাদকসেবীদের আনাগোনা এবং অনৈতিক কাজে বিঘ্নিত ও ব্যহত হচ্ছে পাঠদানের নিরাপত্তা। স্থানীয়দের আশঙ্কা এমনকি যে কোনো সময় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা শিকার হতে পারে দুর্ঘটনার। সবচেয়ে অনিরাপদে মেয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন, এমতাবস্থায় ঘরটি ভেঙে ফেলা হলে মাদকসেবীদের কাছ থেকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা মুক্তি পেতো।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বরিশাল ক্রাইম ট্রেস ডটকম’কে বলেন, স্কুল চলা অবস্থায় বেশি টেনশনে থাকতে হয়। পরিত্যক্ত ঘরটির একদম ওয়াশ ব্লকের পাশে থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক ডাকে সারা দিতে গিয়ে কোন না কোন সমস্যায় পরে। ঘরটি ভেঙে ফেলার জন্য জন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই।
বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম কবির বরিশাল ক্রাইম ট্রেস ডটকম’কে বলেন, আমিও জানতে পেরেছি তৎকালীন হাইস্কুলের ছাত্রাবাসের অংশবিশেষ পুরনো টিনের এই ছাত্রাবাসটি কয়েক যুগ ধরে বন্ধ থাকায় সেখানে মাদকসেবীদের আখড়া খানায় পরিনত হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। উপজেলার অভিভাবক ইএনও মহোদয়ের পরামর্শক্রমে জনস্বার্থে ছাত্রাবাসটি অপসারণে পদক্ষেপ নেয়া হলে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হরেকৃষ্ণ অধিকারী বরিশাল ক্রাইম ট্রেস ডটকম’কে বলেন, মডেল স্কুলের ভেতরে পরিত্যক্ত ঘরটিতে মাদকের আখড়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। জানার পর পরই শিক্ষার্থীদের এ সংকট উত্তরণে পরিত্যক্ত ঘরটি যাতে দ্রুত অপসারণ করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.