নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব মাঠে রাতের কোনো এক সময়ে মসজিদের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ হওয়ায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঘটনাটি ঘটেছে গভীর রাতে। পরদিন ভোরে সেখানে ফজরের নামাজ পড়া হয় এবং জোহরের সময় বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে।
স্থানীয়রা জানায়, রাতের নির্মাণকাজ দেখতে পেয়ে ক্লাবের সাবেক কয়েকজন নেতা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এবং মুহূর্তের মধ্যেই টিনশেড ঘর ভাঙিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
মাঠের ভেতরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম থাকায় বিতর্কটি আরও সংবেদনশীল আকার নিয়েছে। (অডিটোরিয়ামের নির্মাণ ২০১৪ সালে শুরু হলেও নানা জটিলতায় এখনও কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।)
মুসলিম ইনস্টিটিউট জামে মসজিদের নামে নির্মাণ করা ঘর ও সাইনবোর্ডের পক্ষে মুসলিম সোসাইটি প্রধান অধ্যাপক আব্দুর রব দাবি করেছেন, মাঠের নির্দিষ্ট অংশ তাদের মালিকানাধীন এবং সেখানে মসজিদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাতের নির্মাণ করা হয়েছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি সালাহউদ্দিন মাসুমও বলেন, সোসাইটির মালিকানাধীন স্থানে মসজিদ করা হচ্ছে; এখানে কারো বাধাদানের অধিকার নেই।
তবে মোহামেডান ক্লাব রক্ষা কমিটির সদস্যরা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছেন—তারা বলছেন মাঠটি ক্লাবেরই সম্পত্তি।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ক্লাবের ভবন উচ্ছেদ করে দেয়ার পর ক্লাব পক্ষ উচ্চ আদালতে মামলা করে। আদালত উচ্ছেদকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং সিটি করপোরেশনকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে ক্লাবরক্ষাকর্মীরা উল্লেখ করেছেন। সেই রায় ও আদালতের নির্দেশনা থাকায় তারা বলছেন, মাঠে নতুন কোনো স্থাপনা করা যাবে না।
মাঠ রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত কমিটির সদস্য ডা. মনীষা চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জানান, ইতিমধ্যেই এই জমির আইনি স্থিতি নিয়ে উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ আছে; সে নির্দেশ মেনে চলা উচিত।
ক্লাবের সাবেক ব্যবস্থাপনা সদস্যরা বলছেন, উচ্ছেদের সময় ক্লাবের কাগজপত্র ও সম্পত্তি রক্ষা করা হয়নি এবং সেদিক থেকে ক্ষতির অভিযোগ আছে।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের কোনও প্রেস বিবৃতি বা বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় নেতারা শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আইনি পথে মালিকানা নির্ধারণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
তাঁরা মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী এই ক্রীড়া-কমিউনিটি স্পেস রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে একরোখা ব্যবহার করা উচিত নয়—আগামী দিনে আদালত-নির্ধারিত সিদ্ধান্ত ও সংশ্লিষ্ট নথি অনুযায়ী স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিৎ।
১৯৩৩ সালে তৎকালীন বৃটিশ যুগে কোলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠার বছর কয়েক পরে ১৯৩৭ সালে বরিশালের তৎকালীন সদর রোডে সার্কিট হাউজের পাশে শাস্তোবাদের নবাবদের নিজস্ব ৩৩ শতক ভ’মি ‘মুসলিম ইনস্টিটিউট’র নামে লিখেদেন নবাব বংশের তৎকালীন উত্তরাধিকারী সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।
১৯৪২ সালে তার পুত্র সৈয়দ ফজলে রাব্বি সহ বরিশালের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার মিলে এখানে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় বরিশালেরও অনেক পরে।
অত্র বর্তমান পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। স্থানীয়রা শান্তি বজায় রাখার উপর জোর দিচ্ছেন এবং কোনোরকম সংঘর্ষ-বাহিত ঘটনা রোধে এলাকাবাসী ও ক্লাব-সোসাইটি নেতারা আন্তরিকভাবে মিলিতভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাচ্ছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.