ভোলার লঞ্চে নারী যাত্রীর কেবিনে গিয়ে চড় খেলেন ব্যবসায়ী!


Barisal Crime Trace -FF প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৫, ২০২২, ৪:১১ অপরাহ্ণ /
ভোলার লঞ্চে নারী যাত্রীর কেবিনে গিয়ে চড় খেলেন ব্যবসায়ী!

স্টাফ রিপোর্টার, ভোলা ॥ ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আল ওয়ালিদ-৯ লঞ্চে এক নারী যাত্রীর কেবিনে গিয়ে চড় থাপ্পড় খেলেন এক মাছ ব্যবসায়ি। এ ঘটনায় ওই ব্যবসায়ি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। তবে লঞ্চ পরিচালক বলছেন, ছিনতাই নয়, নিজের ইজ্জত সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই স্বেচ্ছায় নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন খোয়ালেন। ঘটনাটি কোতোয়ালি থানায় মৌখিকভাবে জানিয়েছেন লঞ্চ পরিচালক। পুলিশ বলছে, ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত চলমান রয়েছে।

হামলার শিকার ওই মাছ ব্যবসায়ির নাম মো. আলাউদ্দিন ফরাজি। তিনি ভোলা সদর উপজেলা ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ২ সন্তানের জনক। ইলিশা চড়ার মাথা মাছ ঘাটের আড়ৎদার তিনি। ওই নারীও একই উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামের বাসিন্দা। অস্থায়ীভাবে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আল ওয়ালিদ-৯ লঞ্চের ২০৬ নম্বর কেবিনে এ ঘটনা ঘটে।

ওই নারীর ভাষ্য, আলাউদ্দিন ফরাজি তাঁর পূর্ব পরিচিত। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সদরঘাট থেকে ভোলার ইলিশার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আল-ওয়ালিদ-৯ লঞ্চে সোফায় বসে তিনি ভোলায় এসেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্যে ছিল আলাউদ্দিন ফরাজির কাছ থেকে ইলিশ মাছ ক্রয় করে তিনি ওই লঞ্চেই ঢাকায় চলে যাবেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে লঞ্চ ইলিশাঘাটে গিয়ে পৌঁছালে আলাউদ্দিন ফরাজি ওই লঞ্চে নিয়ে তাকে ব্যাগ ভর্তি মাছ তুলে দেয়। এরপর তিনি (নারী) ওই লঞ্চের ২০৬ নম্বর কেবিনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যে কেবিনটি আলাউদ্দিন ফরাজি নিজের নামে বুকিং দিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলাউদ্দিন ওই নারীর কেবিনের মধ্যে প্রবেশ করেন। ওই নারীর দাবি তখন তিনি ভাত খাওয়া অবস্থায় ছিলেন। আলাউদ্দিন ওই কেবিনে প্রবেশ করার কয়েক মিনিট পর লঞ্চের স্টাফ সাদ্দামসহ ৩ জন ওই কেবিনে গিয়ে আলাউদ্দিনকে বেধড়ক মারধর করে কেবিন থেকে বাহিরে নিয়ে যায়।

হামলাকারীদেরকে দেখে ওই নারী আলাউদ্দিন ফরাজিকে নিজের স্বামী হিসেবে পরিচয় দেন। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে ওই নারী হামলাকারীদেরকে টাকার অফার দেন। এরপর হামলাকারীরা তাঁর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। তাঁর কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। একপর্যায়ে হামলাকারীরা তাঁর ব্যাগ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন এবং আলাউদ্দিনকে কালীগঞ্জঘাটে নামিয়ে নেয় হামলাকারীরা।

আল-ওয়ালিদ-৯ লঞ্চের পরিচালক মো. মিজানের ভাষ্য, দুপুর ২টার দিকে অন্য এক পুরুষ যাত্রীর সঙ্গে ওই নারী আল-ওয়ালিদ-৯ লঞ্চে করে ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কালীগঞ্জঘাটে ওই পুরুষ যাত্রী নেমে যাওয়ার পর ওইঘাটের কয়েকজন ছেলে ওই নারীর পিছু নেন। তাঁরা ওই নারীকে অনুসরণ করতে থাকে। ওই নারী একই লঞ্চে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাত ১১টার দিকে তাঁর কেবিনে পুরুষ যাত্রী আলাউদ্দিন ফরাজিকে প্রবেশ করতে দেখে তাঁরা আলাউদ্দিনকে মারধর করে কালীগঞ্জঘাটে নামিয়ে নেয়। এরপর আলাউদ্দিন ফরাজি নিজের ইজ্জত ও মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে ওই ছেলেদেরকে নগদ ৪ হাজার টাকা ও হাতে থাকা একটি স্মার্ট ফোন দিয়ে দেয়। আলাউদ্দিন ওই স্মার্ট ফোন ৫ হাজার টাকা দিয়ে পরবর্তী সময়ে নেওয়ার কথা ছিল। এবং আলাউদ্দিন ফরাজি নিজেও ওই নারীকে চাচাতো বোন পরিচয় দিয়েছিল। আলাউদ্দিনের নামে লঞ্চের ২০৬ ও ২০১ নামে দুইটি কেবিন বুকিং ছিল।

পরিচালক মিজানুর রহমান আরো জানান, ঘটনাটি শোনার পর তিনি কোতোয়ালি থানায় ঘটনাটি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এবং আজ শুক্রবার সকালে তিনি আলাউদ্দিন ফরাজির স্মার্ট ফোনটি উদ্ধার করেছেন। তাঁর ধারণা, লঞ্চের কেবিনে ওই নারীর সঙ্গে আলাউদ্দিন ফরাজি অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে চেয়েছিল। বিষয়টি টের পেয়ে কালীগঞ্জের ছেলেরা আলাউদ্দিনকে ধরে উত্তমমধ্যম দিয়েছে।

তবে এ ঘটনায় আলাউদ্দিন ফরাজি জানান, লঞ্চে তাঁর সঙ্গে নারী নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি কোনো নারী যাত্রীকে দেখেননি। এমনকি তিনি কোনো নারী যাত্রীর কেবিনেও যাননি। লঞ্চের স্টাফসহ কালীগঞ্জের ছেলেরা তাকে কি কারনে মারধর করেছেন তা তিনি জানেন না। তাঁর দাবি অকারণেই লঞ্চের স্টাফসহ কালীগঞ্জের ছেলেরা তাকে উত্তমমধ্যম দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৩৫ হাজার ৩শো টাকাসহ একটি স্মার্ট ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। এবং ওই লঞ্চে পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটনও ছিলেন বলেও জানান তিনি।

তবে লঞ্চের বেশ কয়েকজন যাত্রীর অভিযোগ, ওই লঞ্চের স্টাফ ও কেরানি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। লঞ্চের কেবিন স্টাফ ও কেরানি প্রায়ই যাত্রী হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন। যদিও পরিচালক বলছে, লঞ্চের কোনো স্টাফ কিংবা কেরানী যাত্রী হয়রানি করলে তা খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।

তবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটনকে ফোন করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন বলে জৈনিক এক ব্যক্তি ফোনটি রিসিভ করে জানান।এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিন জানান, ঘটনাটির কিছুটা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ঘটনাটির তদন্ত চলমান রয়েছে।