স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল : টানা ৩০ বছর ধরে তথ্যচিত্র নির্মাণে তার সুখ্যাতি পুরো ভারতে। বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের জীবন ইতিহাস পরের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে এখন আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে সমাদৃত একজন পরিচালক। তিনি হলেন শিলা দত্ত।
ভারতের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সাবেক জুরি মেম্বার। জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতার যাদবপুরের নারকেল বাগানে হলেও এই পরিচালকের পৈত্রিক ভিটা বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠিতে। আর মায়ের বাড়ি বরিশাল নগরীর কাউনিয়াতে। তবে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতোকত্তর করেছেন।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে তার বিখ্যাত ডকুমেন্টরি ফিল্ম ‘বিজ্ঞানে সত্যেন বোসের অসামান্য অবদান’ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে প্রদর্শিত হয়। এর আগে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় এই আর্ন্তজাতিক তথ্যচিত্র নির্মাতার।
শিলা দত্ত জানান, তিনি বরিশাল আসতে পেরে উৎফুল্ল একই সঙ্গে ব্যথিতও। শিলা দত্তের মূল বাড়ি বরিশালে এবং সিনেমা প্রর্দশনের জন্য এখানে এলেও নিজের উৎস মূলের স্পর্শ পেতে ছুটে এসেছেন। তার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি শেকড়ে অর্থাৎ বাবা-মার রেখে যাওয়া জন্মভিটায় সিনেমা নিয়ে পৌঁছেছেন।
তিনি বলেন, বরিশালে পৌঁছে আমি ভীষণ রকমের উত্তেজিত। এখানে আমার বাবা-মার বাড়ি ছিল। দেশভাগ সব কিছু তছনছ করে দিলেও অনেক আগে থেকেই বরিশালে আসার আত্মিকটান অনুভব করতাম। এবার আসতে পেরে অসম্ভব রকমের ভালো লাগছে। বরিশালে নেমেই আমি বাবার বাড়ি বাকেরগঞ্জের কলসকাঠি, মায়ের বাড়ি কাউনিয়াতে ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য নদী ভাঙনে জমি ভেঙে যাওয়ায় আমার বাবা-মার বাড়ি দেখতে পারলাম না। দেখতে পারলে আরও ভালো লাগতো।
শীলা দত্ত বলেন, জীবনানন্দের কবিতায় প্রেমের যে বহরটা যে ব্যাপ্তিটা আমি পেয়েছি ওটা আমাকে ভীষণ রকমের আন্দোলিত করে। বিশেষ করে তিনি যখন বলছেন, কী কথা ওই যুবকের সাথে কিংবা বনলতা সেন কবিতা। বরিশালে এসে আমার মনে হয়েছে জীবননানন্দ মারা যাননি। উনি এখনো বেঁচে আছেন। এমন অনুভূতি যে তার বাড়িতে গেলেই তার সঙ্গে দেখা হবে। আফসোস করে তিনি বলেন, জীবনানন্দের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তার আর কিছুই নেই।
চলচ্চিত্রে তার আজকের অবস্থানটি গড়ে নিতে ছাত্রজীবন থেকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে উল্লেখ করে শীলা দত্ত বলেন, আমি চেয়েছি যাদের কারণে একটি সুন্দর ভারত পেয়েছি তাদেরকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে। এজন্যই ডকুমেন্টরি ফিল্ম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই। নিঃসন্দেহে এই পথ সহজ ছিল না। আমাকে সংগ্রাম করে এখানে আসতে হয়েছে। ওখানে আমাদের বাঙাল অভিহিত করা হয় মানে এপার বাংলা থেকে যারা গিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন তাদেরকে বাঙাল অভিহিত করা হয়। শ্রেণী বিভাজন ছিল। সেসবের মধ্য থেকেই লড়াই করে নিজের অবস্থান করতে হয়েছে। প্রথমে যখন ফিল্ম নির্মাণে আসি তখন অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি আমি একজন নারী ডিরেক্টর দেখে। তবে জ্ঞানী খ্যাতিবান আমাকে খুব সাপোর্ট করেছেন বলেই আজকের শিলা দত্ত হয়ে উঠতে পেরছি।
পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নির্মাতা বলেন, একে একে ৩০ বছর আমি সিনেমা নির্মাণে ব্যয় করেছি। আমৃত্যু এর সঙ্গে থাকতে চাই। সুখকর খবর হচ্ছে আমার নির্বাচিত বিষয় এবং ডকুমেন্টারি নির্মাণের ধরণ ভিন্ন। আমার অধিকাংশ সিনেমা ভারত সরকারের অর্থায়নে নির্মিত। সিনেমায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে গিয়ে সংসার পাতা হয়নি উল্লেখ করে শীলা দত্ত বলেন, তথ্যচিত্র নির্মাণে এত বেশি সময় দিতে হয় আমাকে যে কারণে সংসারে সময় দেওয়া হতো না। এজন্যই হয়তো সংসার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
রোববার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ছাত্র কল্যাণ সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে সিনেমা প্রদর্শন ও আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন প্রক্টর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. খোরশেদ আলম। ঢাকা পোস্ট
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :