কলাপাড়ায় ম্যানগ্রোভ বন কাটার হিড়িক


Barisal Crime Trace -FF প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ২০, ২০২৩, ৭:২৬ অপরাহ্ণ /
কলাপাড়ায় ম্যানগ্রোভ বন কাটার হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার, পটুয়াখালী : উপকূলজুড়ে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল ধংসের তা-ব চলছে। ফ্রি-স্টাইলে যে যার মতো করে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ছইলা-কেওড়া, বাইন ও গোলগাছ কেটে ফেলছে। কেউ গাছ কেটে বাড়িঘর বানাচ্ছে। কেউ কেটে বিক্রি করছে। কেউবা আবার মাছের ঘের তৈরি করছে। কেউ কেউ চাষের জমিও তৈরি করছে বন উজাড় করে। বেড়িবাঁধের বাইরের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকালীন সবুজ দেয়ালখ্যাত মাইলের পর মাইল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনাঞ্চল নিধন হলেও বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতিরোধে কিংবা গাছ রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্টো ভূমি ও বনকর্মীদের যোগসাজশের এন্তার অভিযোগ রয়েছে। ফলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকালীন মানুষ ও তার সম্পদহানির ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে।

লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, তার ইউনিয়নের পুরোটা এবং ধুলাসার ইউনিয়নের অর্ধেকটা ৪৮ নম্বর বেড়িবাঁধের পোল্ডার দিয়ে ঘেরা। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। এই বেড়িবাঁধের বাইরের নদী-সাগর পর্যন্ত সম্পূর্ণ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ছইলা, কেওড়া, গোল, বাইন গাছে পরিপূর্ণ ছিল। বনাঞ্চলের প্রস্থ ছিল ৩০০ মিটার থেকে অবস্থানভেদে এক/দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত। অথচ এই বনাঞ্চল এখন শতকরা ৯০ ভাগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বন কেটে সেখানে বাড়িঘর-পুকুর বানানো হয়েছে।

এমনকি ইটভাঁটি পর্যন্ত করা হয়েছে। আন্ধারমানিক নদীর তীরে নীলগঞ্জে এই চিত্র দেখা গেছে। আনছার উদ্দিন এও জানান, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের বিকল্প নেই। এ ছাড়া দুর্যোগকালীন জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় বাঁধও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই ফের বাঁধের বাইরের জায়গায় নতুন করে বনায়ন করার পরামর্শ তার।

একই দৃশ্য ছিল কলাপাড়ার ১২টি ইউনিয়নের যা এখন আর নেই। এখনো কালের সাক্ষীর মতো কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মধুখালীর বনাঞ্চলটি রয়েছে। হাজারের বেশি প্রাচীন ছইলা-কেওড়া গাছ দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে মানুষ বাড়িঘর পুকুর করছে। কারণ ৮৫-৮৬ সালে ভূমি অফিসের একশ্রেণির কর্মচারী আবার কাউকে বনাঞ্চলকে কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দিয়েছে। বন্দোবস্তগ্রহীতারা এতদিন সাহস করেনি।

গত এক দশক ধরে বাড়িঘর বানাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার পানির প্রবাহ আটকে রাখায় প্রথমে গাছগুলো মারা পড়ছে, পরে সুযোগ বুঝে কেটে ফেলা হচ্ছে। আর বন বিভাগের কর্মীরা তো টাকার বিনিময়ে গাছ কাটার সুযোগ করে দেয়; এমন এন্তার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি পূর্ব মধুখালী স্কুলের পশ্চিম পাশের বেশকিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এক সময় পেশাদার বনদস্যু ছিল।

এখন সরকারি দলের চিহ্নিত একটি চক্র এই গাছ কাটার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকছে। এমনকি বেড়িবাঁধের উন্নয়ন কাজেও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির হাজারো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ধুলাসারের গঙ্গামতি এলাকায় উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন সংস্থার ঠিকাদাররা এমনটি করেছেন।

বন বিভাগ মহীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে বারবার মোবাইল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, ম্যানগ্রোভ প্রজাতি এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধংসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।