পটুয়াখালী প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৫১ বছর পর অবশেষে পটুয়াখালীর পুরাতন জেলাখানা বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পটুয়াখালী পৌরসভা। ইতোমধ্যে নকশা চূড়ান্ত করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার প্রাক্কলন গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ সময় পর হলেও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের নির্মমভাবে হত্যা করে পুরাতন জেলখানার গণকবরে ফেলে রাখা হয়েছিল, স্বাধীনতার এতদিন পরও তাদের স্মৃতির উদ্দেশে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর পুরাতন জেলখানার ভেতর দিয়ে বিশেষ অনুমতি নিয়ে শহীদদের গণকবরে পটুয়াখালীর মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে যেত।
এ বছর পুরাতন জেলাখানার দেয়াল ভেঙে যাওয়ায় বাইরে থেকে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়। পৌরসভা থেকে ইতোমধ্যে একটি নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হবে। তবে জায়গাটি যেহেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাই অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করা যাবে না বলেও জানান তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মানস কান্তি দত্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আবদুল মান্নানসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা এ উদ্যোগের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিল, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামসহ একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, জেলায় কতগুলো বধ্যভূমি বা গণকবর রয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। তবে পটুয়াখালী পৌর শহরের মাতবরবাড়ি গণকবর, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে আনসারদের গণকবর, পুরাতন জেলখানা গণকবর উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ও গলাচিপা উপজেলার চিকনীকান্দি এবং সুতাবাড়িয়া গণকবর রয়েছে বলে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম নিশ্চিত করেছে। এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে অনেক গণকবর ও বধ্যভূমি রয়েছে যা আজো চিহ্নিত হয়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর এম নুরুল ইসলাম জানান, পটুয়াখালীতে ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অসংখ্য অপরাধের ঘটিয়েছে।
এসব অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছেন পাকিস্তানি ৯ম ডিভিশনের কর্নেল আতিক মালিক, মেজর ইয়াহিয়া, মেজর তারেক মুহম্মদ, ক্যাপ্টেন হাবিব শাহ, ক্যাপ্টেন আহসান, মেজর নাদের পারভেজ ও মেজর ইয়ামিন। বিশেষ করে মেজর নাদের পারভেজ ছিলেন নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী আর ক্যাপ্টেন হাবিব শাহ্ জেলা সদরসহ ইটবাড়িয়া, চিকনীকান্দি এলাকায় গণহত্যার নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যাদের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা হতো তাদের হত্যা করে ফেলে দেওয়া হতো পুরাতন জেলখানার গণকবরে। বিজয় অর্জনের পর ওই গণকবর থেকে পাঁচ শতাধিক মানুষের মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়েছিল।
জানা যায়, ১৯৭১-এর ২৬ এপ্রিল পটুয়াখালী শহরের পতন হলে শহরজুড়ে গণহত্যা চালায় পাকিবাহিনী। দুপুরের পর শহরের কালিকাপুর এলাকায় নামানো হয় ছত্রীসেনা। মাতবরবাড়িতে ওই দিন শহীদ হন ১৯ জন। পরে তাদের সেখানেই গণকবর দেওয়া হয়। মাতবরবাড়ি ছাড়াও পাকবাহিনী পুরাতন জেলখানার দক্ষিণ পাশসহ শহরের বুকে চালায় নির্মম হত্যাকা-। হানাদাররা আগুন ধরিয়ে দেয় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজার ও চকবাজারে। এ সময় শত শত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পুড়ে ভস্মীভূত হয়।
অন্যদিকে ১৯৭১ সালের ৬ মে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জেলার গলাচিপা থানার চিকনীকান্দি, মাঝগ্রাম ও উত্তর সুতাবড়িয়া এলাকায় ব্যাপক গণহত্যা চালায়।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :