নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর ও বগুড়ার আদমদীঘি এই দুই উপজেলার সীমানায় অবস্থিত শত বছরের ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল। বিলের আশেপাশে ৪০টি গ্রামের মানুষের বসবাস। এই মানুষদের চলাচলের একমাত্র ভরসা মেঠোপথের শেষে খেয়াঘাটের নৌকা। বিলে পানি যতদিন থাকে ততদিন নৌকায় পারাপার আর যখন পানি থাকে না তখন প্রয়োজনীয় কর্ম সমাধান করতে ৪০-৫০কিমি রাস্তা ঘুরে নওগাঁ, বগুড়া, রাণীনগর, আদমদীঘিতে যেতে হয়। এতে করে বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে জীবন-যাপন করে আসতে হচ্ছে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের। কৃষকরা নায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। হাজার চেষ্টাতে এই অঞ্চলের মানুষদের ভাগ্যে খেয়াঘাটে একটি ব্রিজ জোটেনি যার ফলে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল থেকেও বঞ্চিত এই কৃষিপ্রধান অঞ্চলটি।
বোদলা গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইদুর রহমান মুহরী জানান, কথিত আছে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে এই অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় ফকির মজনু শাহর বাহিনীর সঙ্গে। এই বিলের মধ্যদিয়ে যুদ্ধে নিহত উভয় বাহিনীর সৈন্যের রক্ত একদিয়ে আরেক দিকদিয়ে পানি বয়ে যায় তখন থেকে এই বিলটি রক্তদহ বিল হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। মাধ্যমিক পর্যায়ের একাধিক পাঠ্যবইয়েও এই বিলের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। কয়েক হাজার বিঘা জমি নিয়ে এই বিল অবস্থিত। বিলের পূর্বপাশে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কৃষি প্রধান অঞ্চল বোদলা, পালশা, কৃষ্ণপুর, তেবাড়িয়াসহ ৪০টি গ্রাম অবস্থিত। এই মানুষদের সহজেই নওগাঁ, বগুড়া, রাণীনগর, আদমদীঘি, সান্তাহারে চলাচলের সহজপথ হচ্ছে বিলের মধ্যদিয়ে রাস্তা। বিলের মধ্য একটি ব্রিজ না হওয়ার কারণে মেঠোপথ দিয়েই খেয়াঘাটে পারাপার হতে হয়। পারাপারের জন্য খেয়াঘাটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় নৌকার জন্য।
এই অঞ্চলের মানুষদের হাতে দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় হাতে বেশি নিয়ে অন্যত্র যেতে হয়। একটি ব্রিজের অভাবে এখনোও এই অঞ্চলের মানুষদের প্রাচীন যুগে বসবাস করতে হচ্ছে। দিনের বেলায় ঘাটে এসে নৌকা পাওয়া গেলেও রাতের বেলায় ৪০-৫০কিমি রাস্তা ঘুরে এই অঞ্চলের মানুষদের নিজের বাড়িতে ফিরতে হয়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থী ও জরুরী রোগীদের। অনেক প্রসুতিদের হাসপাতালে নেয়ার পথে এই খেয়াঘাটে এসেই প্রসব হয়ে যায়। অনেক জটিলতা শেষে ২০১৯সালে এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে অনুমোদন পেলেও পরবর্তিতে সেই কার্যক্রম রহস্যজনক কারণে আর আলোর মুখ দেখেনি। সহজেই নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে না পারার কারণে নায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক। দ্রুত এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ বর্তমানে সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমার জানা মতে ব্রিজ নির্মাণের সকল প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। সকল বিভাগীয় প্রক্রিয়া শেষে অর্থ বরাদ্দ পেলেই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। আমি আশাবাদি অতিদ্রুতই এই অঞ্চলের মানুষদের শতবছরের স্বপ্নের ব্রিজ নির্মাণের সুখবর দ্রুতই পাওয়া যাবে।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, চীনের হুয়াংহু নদীর মতো এই রক্তদহ বিলও এই অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি দু:খ। এই ঘাটে একটি ব্রিজ এই অঞ্চলটিকে আমুল বদলে দিতে পারে। আমিও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে একাধিকবার ব্রিজ নির্মাণের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য তাগাদা দিয়েছি। আমি আশাবাদি জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া হিসেবে এই ঘাটে দ্রুত একটি আধুনিকমানের ব্রিজ নির্মাণের সুখবর পাওয়া যাবে।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :