কুয়াকাটা বাস টার্মিনাল ১৯ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি


Barisal Crime Trace -FF প্রকাশের সময় : মার্চ ১৩, ২০২৩, ১২:২১ অপরাহ্ণ /
কুয়াকাটা বাস টার্মিনাল ১৯ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি

কলাপাড়া প্রতিনিধি : কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এখন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নে এ সৈকতের অবস্থান। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা সাগরকন্যা হিসেবে পরিচিত। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের আগমন ঘটছে এখানে। তাদের পরিবহনে বেড়েছে গাড়ির চাপও। এছাড়া পর্যটকদের কেন্দ্র করে দিন দিন বাড়ছে স্থানীয় গাড়ির চাপও।

তবে কোনো টার্মিনাল না থাকায় কুয়াকাটার প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানবাহনের পার্কিং। অস্থায়ী খোলা মাঠের ব্যবস্থা থাকলেও সড়কের যেখানে সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে গাড়ি। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে দেড় বছর আগে ১৩ কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে বাস টার্মিনাল নির্মাণ শুরু হলেও এখনো বাকি প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ। ফলে পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এর জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়র। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, গাফিলতি নয় বাস টার্মিনাল সংক্রান্ত জটিলতায় কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের হাত ধরে কুয়াকাটা-পটুয়াখালী মহাসড়ক সংলগ্ন তুলাতলী এলাকায় ছয় একর জমির ওপর বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুটি প্যাকেজে এ কাজ নির্মাণের দায়িত্ব পায় পটুয়াখালীর মেসার্স গিয়াস উদ্দিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার প্রথম প্যাকেজের বালু ভরাটের কাজ শেষ হলেও দেওয়াল নির্মাণের বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি। আর দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতাধীন ড্রেনের কিছু কাজ ও ভবনের বেজ, কলমের কাজ শেষ হলেও ছাদসহ উপরিভাগের সব কাজ এখনো বাকি। এছাড়া ফুটপাত, পার্কিং ও গ্রিন জোনের সব কাজ বাকি।

এ কাজের প্রথম মেয়াদ শেষ হয় ২২ সালের জুন মাসে পরে দ্বিতীয় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২৩ সালের জুন পর্যন্ত। তবে মেয়াদ বাড়ানোর আট মাস পার হলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। তবে দুদফায় মেয়াদ বাড়ালেও এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় ও পর্যটকরা।

স্থানীয়রা জানান, প্রথমদিকে বালু ভরাট, বাউন্ডারি দেওয়াল, ড্রেন নির্মাণের কিছু অংশের কাজ দ্রুত গতিতে করা হয়। এরপরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে এ জনগুরুত্বপূর্ণ বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ। ফলে কুয়াকাটায় আগত অসংখ্য পর্যটকবাহী ও কুয়াকাটা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করা কয়েকশ গাড়ির যত্রতত্র রাস্তার দুপাশে পার্কিং ভোগান্তি নেমে আসে স্থানীয় ও পর্যটকদের ওপর।

ঝিনাইদহ থেকে কুয়াকাটা আসা পর্যটক সাইদুজ্জামান বলেন, ‘কুয়াকাটায় আমরা বেড়াতে এসেছি। এখানে আর কিছু না হোক একটা বাস টার্মিনাল তো থাকবে। কারণ, প্রতিদিন কয়েকশ যানবাহন প্রবেশ করছে কুয়াকাটায়। সব গাড়ি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট দেখা দেয়। তাই আমাদের দুই কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে আসতে হয়েছে। এ দুর্ভোগ না কমলে কুয়াকাটায় আর আসবো না।’

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কয়েকগুণ পর্যটক বেড়েছে। ফলে যানজটে নাকাল থাকে কুয়াকাটা। তবে বাস টার্মিনালের কাজ শুরু হলেও ধীরগতি। কুয়াকাটার জন্য এ টার্মিনাল অতি প্রয়োজনীয়। দ্রুত এর সমাধান না হলে পর্যটন খাত মুখ থুবড়ে পড়বে।’

এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কাজ শুরু হওয়ার পরপরই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে ২০২২ সালের মধ্যেই টার্মিনালের কাজ শেষ করতে। কিন্তু হঠাৎ ঠিকাদার কাজ কিছুদিন বন্ধ রাখে। ঠিকাদারকে চাপ দেওয়া হয়েছে, যাতে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে এর উদ্বোধন করা যেতে পারে। মেয়রের দাবি, শুধুমাত্র ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এ কাজে বিলম্ব হচ্ছে। কারণ আমাদের আর্থিক বা প্রশাসনিক কোনো সমস্যা নেই।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গিয়াস উদ্দিনের স্বত্বাধিকারীর মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ডের কাজ গাফিলতির কারণে বিলম্ব হচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণের কিছু ঝামেলা ও বালু ইজারাদার নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু কারণে আমাদের দেরি হচ্ছে। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। জনবলও বাড়ানো হয়েছে। আশা করি চলতি বছরের এপ্রিলে কাজ শেষ করতে পারবো।’

পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মহিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের কুয়াকাটা আজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাস টার্মিনালের কাজ শুরু হলেও একটু ধীরগতি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসক, পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি কাজ দ্রুত শেষ করতে। তারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মার্চের পর আমরা উদ্বোধনে যেতে পারবো। জাগো নিউজ