স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল : বরিশালে দলীয় কর্মসূচিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বরিশাল দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপিতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে কৌশলে পা ফেলছেন। সম্প্রতি অনুসারীদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করেছেন। দীর্ঘদিন স্থানীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা সরোয়ারের এমন তৎপরতায় দলের প্রতিপক্ষ শিবিরে বিরাজ করছে অস্বস্তি। যদিও তা মানতে নারাজ মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক। তিনি বলেন, ‘এখানে কেউ কাউকে কোণঠাসা করেনি। দলে কোনো বিভক্তিও নেই। ত্যাগীদের মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা হয়েছে। সব জেলায়ই কর্মসূচি সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা দায়িত্ব পাচ্ছেন। সে প্রক্রিয়ায় সরোয়ারকে বরিশালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর বরিশাল মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল করে আহ্বায়ক কমিটি দেয় কেন্দ্র। এতে মহানগর সভাপতির পদ থেকে বাদ পড়েন প্রভাবশালী নেতা সরোয়ার। সঙ্গে বিলুপ্ত কমিটিতে তাঁর অনুসারী ১৭১ সদস্যের বেশিরভাগ নেতাকেও আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়নি। এতে সরোয়ারপন্থিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এর পর বিগত দেড় বছর বরিশালের রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখেন সরোয়ার। দেশজুড়ে কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হলেও তাঁকে উপেক্ষা করেছে বিএনপি।
এ বিষয়ে সরোয়ারপন্থি নগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিক বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটি থেকে কেন আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তার উত্তর আজও পাইনি। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি খেয়ালখুশিমতো কর্মসূচি পালন ও পছন্দের লোকজন নিয়ে ওয়ার্ড কমিটি করছে। বাদ পড়া ৪২ নেতা কেন্দ্রে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। বর্তমান কমিটির নেতারা দলীয় কর্মসূচিতে ডাকে না। এজন্য নিজের মতো করে কর্মসূচি করে এসেছি।’ তবে গত শনিবার বরিশাল উত্তর বিএনপির মানববন্ধনে কেন্দ্র থেকেই প্রধান অতিথি করা হয় সরোয়ারকে। সেখানে পাঁচ শতাধিক অনুসারী নিয়ে অংশ নেন তিনি। এর আগে ৪ মার্চ বরিশাল দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রায়ও বিশাল শোডাউন করেন সরোয়ারপন্থিরা। নগরের কাউনিয়া থেকে সদর রোড হয়ে আমতলা মোড় পর্যন্ত বড় জমায়েতের নেতৃত্বও দেন সরোয়ার।
পদযাত্রা ও মানববন্ধনের মাধ্যমে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় সরোয়ারবিরোধী শিবিরে চলছে নানা গুঞ্জন। রীতিমতো অস্বস্তিতে ভুগছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরোয়ারের অনুসারী একাধিক নেতা জানান, সরোয়ার স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকুক, তা বর্তমান মহানগর কমিটির নেতারা চান না। আহ্বায়ক কমিটির অনেকে বিএনপির টিকিটে মেয়র কিংবা এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাঁদের এ পথে একমাত্র বাধা সরোয়ার। এ জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন সরোয়ারকে কোণঠাসা করে রেখেছেন। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশে সামান্য সুযোগ পেয়েই প্রমাণ করেছেন বরিশাল বিএনপিতে সরোয়ার কতটা অপরিহার্য। সূত্রের দাবি, স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য পুনরুদ্ধারে খুবই সতর্ক সরোয়ার। বরিশাল দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন তিনি। কারণ, দক্ষিণ জেলায় রয়েছে বরিশাল সদর আসন ও সিটি করপোরেশন।
সরোয়ার সিটি করপোরেশন ও সদর আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, ‘পদযাত্রায় কেন্দ্র থেকে সরোয়ারকে প্রধান অতিথি করা হয়। তিনি বরিশাল সিটি মেয়র, সদরের এমপি ও হুইপ ছিলেন। দলে তাঁর প্রভাব ব্যাপক। সামনে সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচন। এ জন্য নিজ থেকেই এলাকায় সক্রিয়তা বাড়িয়েছেন।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরোয়ার বলেন, ‘বরিশালে ছাত্ররাজনীতি, ট্রেড ইউনিয়ন ও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। মাটি ও মানুষের মধ্যে বেড়ে উঠেছি, দুঃসময়ে বিএনপি ছেড়ে যাইনি। জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি। বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ ও নেতাকর্মীর সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক। কেউ চাইলেও স্থানীয় রাজনীতি থেকে আমাকে দূরে রাখা সহজ হবে না।’ সমকাল
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :