নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বিশ্বের সর্ববৃহৎ আর্ন্তজাতিক নগরী বলা হয় লন্ডনকে, যেখানে ৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাস। ৩২টি বারা বা নগর কর্তৃপক্ষ নিয়ে গঠিত লন্ডন নগরীর মেয়র নির্বাচন ২০২৪ সালের ২ মে। যেখানে নতুন ইতিহাস গড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছেন বরিশালে জন্ম ও বেড়ে উঠা মোজাম্মেল হোসেন কিউসি, যার ডাক নাম অরুন।
লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে ব্রিটেনের ক্ষমতাশীন দল কনজারভেটিভ পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দলের ভেতরে বাইরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা ডেনিয়্যাল করসকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে এরই মধ্যে সরে গেছেন।
বাকি সুসান হল ও মোজাম্মেল এই দুই প্রার্থীর মধ্যে এখন চলছে বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরে ভোটের লড়াই। কনজারভেটিভ পার্টির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক নিক ক্যান্ডিসহ দলের অনেক শীর্ষ নীতি নির্ধারকের সমর্থন ইতোমধ্যেই পেয়েছেন মোজাম্মেল।
চলতি মাসের ১৮ জুলাই পর্যন্ত দলীয় সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে আগামী ১৯ জুলাই কনজারভেটিভ পার্টি সুসান ও মোজাম্মেলের একজনকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবে। কনজারভেটিভের মনোনয়ন পেলে লন্ডনের বর্তমান মেয়র পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খানের সঙ্গে লড়তে হবে মোজাম্মেল হোসেনকে।
বহুজাতিক অভিবাসী মানুষের নগর লন্ডনে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র লেবার পার্টির সাদিক খানকে ঠেকাতে আরেক অভিবাসী মোজাম্মেলকে প্রার্থী করে ভোট টানার কনজারভেটিভের কৌশল নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে ব্রিটেনের রাজনীতিতে। ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী ভোটারের বাস লন্ডনে।
লন্ডন নগরীতে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি ভোটার রয়েছেন। অন্যান্য অভিবাসী কমিউনিটির মতো বাংলাদেশি কমিউনিটিতেও লেবার পার্টির সমর্থক কনজারভেটিভের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
মোজাম্মেল মনোনয়ন পেলে তিনিই হবেন প্রথম বাংলাদেশি যিনি লন্ডনের মেয়র পদে বড় কোনও রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী। সাদিক খানের নিরাপদ ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশি ভোটারদের সমর্থন দলীয় বৃত্তের বাইরে মোজাম্মেলের পক্ষেই সেক্ষেত্রে ভারী হবে স্বভাবতই।
তাতে একদিকে যেমন সাদিক খানের ভোট কমবে, অন্যদিকে তা যুক্ত হবে মোজাম্মেলের পক্ষে। লন্ডনে সাত লাখের বেশি ভারতীয় জনগোষ্ঠীর বাস।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রতি দল মতের বাইরে সমর্থন রয়েছে লন্ডনের ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর। ঋষি সুনাকের দলীয় প্রার্থী হিসেবে ভারতীয় কমিউনিটির ভোটও মোজাম্মেলের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরের বিভিন্ন পর্যায়ে মোজাম্মেল হোসেনের প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে মোজাম্মেল সমর্থকরা বিশ্বাস করেন।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত লন্ডনের দুই বারের মেয়র সাদিক খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাংলাদেশে জন্ম ও বেড়ে উঠা মোজাম্মেল হোসেন শেষ পর্যন্ত দলের টিকেট পাবেন কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত।
স্বনামখ্যাত এই ক্রিমিনাল ব্যারিস্টার বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ব্রিটেনের প্রথম কিউসি। ব্রিটেনে আইন পেশায় পেশাগত দক্ষতায় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদ কিউসি। মোজাম্মেল হোসেন ১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সে ব্রিটেনে আসেন।
আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০১ সালে বার অ্যাট ল ডিগ্রি অজর্ন করা এই পেশাদার আইনজীবী ২০১৯ সালে ব্রিটেনের বয়সে সর্বকনিষ্ঠ কুইনস কনসাল নিযুক্ত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
লন্ডনের বর্তমান মেয়র সাদিক খান নিজেকে একজন নিম্নবিত্ত ইমিগ্রান্ট ও বাস ড্রাইভারের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়ে দুই দফায় লন্ডনের ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির ভোট নিজের পক্ষে টানতে সমর্থ হন।
মোজাম্মেল হোসেনও ব্রিটেনের মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোকে সাক্ষাতকারে বলেছেন, তার শৈশবের পারিবারিক অসচ্ছল জীবনযাপন আর আর্থিক দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রামের স্মৃতির কথা।
আত্মপ্রত্যয়ী অকপট এ রাজনীতিক বলেন, ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত তার নিজের এক জোড়া জুতা ছিল না। তার এমন বক্তব্য অভিবাসী ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবে দেখছেন সমালোচকরা।
মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, আমার যা কিছু আছে সবকিছু এই লন্ডন শহর দিয়েছে। লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হলে লন্ডনকে নিরাপদ ও নগরবাসীর জন্য জনবান্ধব নগরী হিসেবে বিনির্মাণ করতে চাই।
কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া লন্ডনের কনজারভেটিভ পার্টি নেত্রী ডা. আনোয়ারা আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোজাম্মেল হোসেন একান্তই তার নিজের যোগ্যতায় উঠে আসা একজন সম্ভাবনাময়, প্রতিশ্রুতিশীল ও উদাহরণীয় রাজনীতিক। দলের মনোনয়ন পেলে তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
আমি তার জন্য কাজ করছি। মোজাম্মেলের বেড়ে ওঠা আর তার সংগ্রামী জীবন লন্ডনের তরুণ প্রজন্মকে নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত করার মতো। বাংলাদেশিদের উচিত দল মত নির্বিশেষে তাকে সমর্থন করা।
মোজাম্মেল হোসেনের বক্তব্য জানতে সোমবার (১০ জুলাই) যোগাযোগ করা হলে তিনি তার নির্বাচনি কৌশল হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে শুরুতেই কথা বলবেন।’
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :