স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল : বরিশাল নগরীর উপকণ্ঠ তালতলী এলাকার বাসিন্দা মিরাজ হোসেনের পরিবারের রান্নাবান্না চলে তরলজাত (এলপি) গ্যাস দিয়ে। বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের পাঁচটি সিলিন্ডার আছে তাঁর। কিন্তু গত ১৫ দিনে বিভিন্ন দোকান ঘুরে এই কোম্পানির সিলিন্ডার তিনি পাননি। সিলিন্ডার বদল করে অন্য কোম্পানির গ্যাস দিতে রাজি হননি বিক্রেতারা।
বাধ্য হয়ে তিনি ২ হাজার ৪০০ টাকায় ওমেরার ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনেছেন। একই পরিস্থিতির শিকার আরেক গ্রাহক নগরীর নবগ্রাম সড়কের রফিকুল ইসলাম। তাঁর রয়েছে বসুন্ধরার তিনটি সিলিন্ডার। ওই কোম্পানির গ্যাস না পেয়ে সিলিন্ডার বদল করে অন্য কোম্পানিরটা নিতে চেয়েছিলেন। বিক্রেতারা রাজি হননি। বাধ্য হয়ে ওমেরা কোম্পানির সিলিন্ডার নিয়েছেন।
শুধু এই দু’জনই নন, এলপি গ্যাসের সংকটে বড় সমস্যায় পড়েছেন নগরীর শত শত গ্রাহক। পুরো দক্ষিণাঞ্চলে এ সংখ্যা কয়েক হাজার। চলতি মাসের শুরু থেকে বসুন্ধরাসহ পাঁচ কোম্পানির সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ। যেসব কোম্পানি এখনও সরবরাহ করছে, তারা চাহিদার চার ভাগের এক ভাগও দিতে পারছে না। এই সংকটে চলতি মাসে দুই দফায় দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। চরম বিপাকে পড়া ভোক্তাদের সিলিন্ডার বদল করে অনেক ক্ষেত্রে দেওয়া হলেও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি গ্যাস কোম্পানির একাধিক পরিবেশক জানিয়েছেন, প্রতিটি কোম্পানি বিদেশ থেকে এলপি গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে সংকটে পড়েছে। এ কারণে তারা পরিবেশকদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না। পরিবেশকরা দিতে পারছেন না খুচরা ব্যবসায়ীদের। এর প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। পরিবেশকরা বলছেন, সংকট অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে দাম আরও বাড়তে পারে।
বরিশালে বসুন্ধরা গ্যাসের পরিবেশক মো. রাসেল বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে তারা চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ সরবরাহ পাচ্ছেন। গত ৪ আগস্ট থেকে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ। পেট্রো গ্যাস কোম্পানির পরিবেশক মলয় দাস পীযূষ বলেন, তিন দিন সরবরাহ বন্ধ থাকার পর সোমবার একটি ট্রাকে ৪২০টি সিলিন্ডার দিয়েছে কোম্পানি। তাঁর চাহিদা ছিল ৬০০টি। এলপি গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানি অরিয়নের পরিবেশক তরিকুল ইসলাম জানান, এ মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৫০ টাকা এবং গত সপ্তাহে আরও ৫০ টাকা বেড়েছে প্রতি সিলিন্ডারে।
নগরীর গোঁড়াচাঁদ দাশ সড়কে এলপি গ্যাসের খুচরা বিক্রেতা চৌধুরী ট্রেডার্সের জহিরুল ইসলাম জানান, দুই মাস ধরে স্থানীয় পরিশেকরা চাহিদা অনুযায়ী সিলিন্ডার দিচ্ছেন না। অন্য কোম্পানির সিলিন্ডার বদল করলে পরিবেশকরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন। দীর্ঘদিন সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। তিনি জানান, বসুন্ধরার সরবরাহ বন্ধ প্রায় দুই মাস। এ মাসে আরও চার-পাঁচটি কোম্পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সীমিত আকারে সরবরাহ অব্যাহত থাকা কোম্পানির কাছে খুচরা বিক্রেতা ও গ্রাহকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা বলেন, এলপি গ্যাস নিয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে প্রায়ই তারা অভিযোগ পাচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। পরিবেশকদের কাছে গেলে তারা মূল কোম্পানি থেকে বেশি দামে কেনার ভাউচার দেখান। এ ক্ষেত্রে তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। দুই-একদিনের মধ্যে তারা বাজার মনিটরিংয়ে নামবেন।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :