পটুয়াখালী প্রতিনিধি : ‘আজ তিনদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি, ব্লাড দিতে হচ্ছে। কোনো সিট পাই নাই। এখন বারান্দায় একটা ফোম বিছাইয়া থাকতে হইতেছে। বৃষ্টিতে ভিজতেছি, কী করমু সাতদিন থাকলেও সিট পাওয়া যায় না। হাসপাতালে সিট নাই, খাবার নাই। এরপরও বাধ্য হয়ে থাকতেছি।’
এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন পটুয়াখালী পৌর এলাকার বাসিন্দা নাজমা বিশ্বাস। গত তিনদিন ধরে তিনি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীদের গল্প এমনই। তবে বৃষ্টির কারণে এর থেকেও খারাপ অবস্থা অনেক রোগীর। কথা হয় গলাচিপা উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে।
আম্বিয়া খাতুন নামে ওই রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমরা গতকাল বিকেলে হাসপাতালে আসছি। আমার স্বামী অসুস্থ। সারারাত ঘুমাইতে পারিনি। ভেতরে জায়গা পাইনি, বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেছি। কী করমু এই ভোগান্তির মধ্যে থাইক্কাই চিকিৎসা করাইতেছি।’
নামে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হলেও বাস্তবে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চলছে এর কার্যক্রম। আর বর্তমানে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি থাকছেন। ফলে হাসপাতালে কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এর ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জনবল সংকট নিয়ে বাড়তি রোগীর চিকিৎসা করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। তবে এরপরও নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
গত কয়েকদিন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের পুরাতন ভবনে প্রবেশ করতেই বারান্দায় ডেঙ্গু রোগীদের ভিড়। বারান্দায় বসানো হয়েছেন বেশ কয়েকটি বিছানা। প্রতিটি ওয়ার্ডের ঢোকার পথগুলোতে সারি সারি খাট বসানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের খাটের পাশে বাড়তি বিছানা দিয়ে রোগীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কোথাও যেন হাঁটার পথও নেই।
পুরো হাসপাতালের এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানে রোগীদের ভিড় নেই। আর যোগ হয়েছেন রোগীদের স্বজন। প্রতি রোগীর সঙ্গে দুই থেকে তিনজন হাসপাতালে অবস্থান করছেন। এতে করে একইসঙ্গে হাসপাতালে এখন নিয়মিত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষের জমায়েত থাকছে। ফলে হাসপাতালটি এখন রীতিমতো জনবহুল এলাকায় পরিণত হয়েছে। এরইমধ্যে চলছে রোগীদের চিকিৎসা।
বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা ইকবাল ফরাজী পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তিনদিন আগে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোনো বেড খালি না থাকায় গত তিনদিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। মানুষ পাশ দিয়ে হাঁটাচলা করছে। বৃষ্টির কারণে হাসপাতালের মেঝেও স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে। এরপরও বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমীন লিজা বলেন, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামো দিয়েই বর্তমান হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে সাড়ে পাঁচশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকছে। পাশাপাশি বহির্বিভাগে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। সব মিলিয়ে এই তালিকা অনেক বড়। এরপরও আমরা আমাদের যেটুক সামর্থ্য আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :