বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত একাধিক ঘরে ঝুলছে তালা। আবার কেউ ভাড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীন বাছাই করতে না পারা, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক দুর্নীতি এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল।
তবে প্রশাসন বলছে, যেসব ঘর খালি পড়ে আছে সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নামে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, জেলার ছয়টি উপজেলায় চার ধাপে ৩ হাজার ২৪৪টি ঘরের অনুকূলে ৮৫ কোটি ১৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারকে ২ শতাংশ জমি দেওয়া হয়।
২০২০ সালে ২০টি ঘর নির্মাণ করে সুবিধাভোগীদের নামে বরাদ্দ দেয় তালতলী উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের বেথীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২০টি ঘরের মধ্যে ১০টিতে বসবাস করছেন সুবিধাভোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজন। এর মধ্যে ভাড়ায় থাকছে চারটি পরিবার। বাকি ১০টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আবার কেউ কেউ লাকড়ির ঘর হিসেবেও ব্যবহার করছেন ঘর।
এই আবাসনের ১২ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ দেওয়া হয় স্থানীয় জলিল জোমাদ্দার নামে। কিন্তু ওই ঘরটিতে বর্তমানে বসবাস করছেন অলকা রানী ও দীপঙ্কর নামের আরেকটি পরিবার। এ সময় অলকা রানী বলেন, ‘মোগো ঘরবাড়ি কিছুই নাই। হেইজন্যে মাসে ৫০০ টাহা (টাকা) করে ভাড়া দিয়া এই ঘরে থাহি। মোগো ঘরবাড়ি নাই, আর সরকার মোগো ঘর দেয় নাই, আর জ্যাগো (যাদের) ঘরবাড়ি, জাগাজমি আছে হ্যাগো (তাদের) ঘর দিয়া থুইছে।’
একই আবাসনের ১৯ নম্বর ঘরে বসবাসরত আবু তাহের বলেন, ২০টি ঘরের মধ্যে ১০ থেকে ১২টি ঘরে কখনোই সুবিধাভোগীরা বসবাস করেননি। তাঁর দাবি, যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই নিজস্ব ঘরবাড়ি ও জমিজমা আছে।
এ আবাসনের ১৮ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ হয়েছে পার্শ্ববর্তী মো. রাসেল নামের এক ব্যক্তির নামে। রাসেল তাঁর বাবার একমাত্র ছেলে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ঘরের পাশেই রয়েছে রাসেলের বিশাল বাড়ি এবং বড় একটি টিনের ঘর। এ সময় রাসেলকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর (রাসেলের) বাবা আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমার একটি ঘর আছে; কিন্তু ছেলের ঘর নাই। সে জন্যে সরকারি ঘর বরাদ্দ নিয়েছে ছেলে।’ আপনার ঘর থাকতে তাঁর ঘর লাগবে কেন– এমন প্রশ্নের জবাবে লতিফ বলেন, ‘ইউএনও ঘর দেছে আমরা নিছি।’
একই আবাসনের ৩ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন পার্শ্ববর্তী মো. হাশেম। কিন্তু আবাসনের পাশেই রয়েছে হাশেমের পুকুর, বাড়িঘর। তিনিও এই ঘরটি ভাড়া দিচ্ছেন। ঘর বরাদ্দ নিয়ে কেন ঘরে থাকছেন না– এমন প্রশ্নের জবাবে হাশেমের স্ত্রী রীনা বেগম বলেন, ‘এখানে বিদ্যুৎ নাই, সে জন্য থাকি না।’
এ আবাসন ছাড়াও একই ইউনিয়নের ছোটবগী বাজারসংলগ্ন ১০টি ঘর নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তার অধিকাংশ খালি রয়েছে। জেলার বড়বগী ইউনিয়নের পাজরাভাঙ্গা এলাকায় নির্মিত ৫১টি ঘরের মধ্যে ১০টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। জেলা শহরের উপকণ্ঠে নির্মিত দেশের অন্যতম বৃহত্তম আবাসন কেন্দ্রসহ অন্যান্য আবাসনে একাধিক সুবিধাভোগী বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে বসবাস করছেন না। আবার কেউ ভাড়া দিচ্ছেন। বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলার ছোটবগী ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, বেশির ভাগ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নেন না। এ কারণে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন বাছাই করতে পারেন না। এ জন্য অধিকাংশ ঘর খালি থাকে।
তালতলীর ইউএনও সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, এ বিষয়ে কিছু অভিযোগ আসছে এবং অভিযোগের কিছু সত্যতাও আছে। এরই মধ্যে অভিযোগ এসেছে, যেসব সুবিধাভোগীর জমির দলিল সম্পন্ন হয়নি, তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। আর যেগুলোর দলিল সম্পন্ন হয়ে গেছে, তা বাতিল করতে কাজ করছেন তারা।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :