পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পরিত্যক্ত ঘরে হাত-পা বেঁধে রাতভর নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ব্যবসায়ী রেজাউল করিম রাসেল থানায় অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের সত্যতাও পায় পুলিশ। কিন্তু এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাবে পুলিশ ভোল পালটে ফেলে। উলটো নির্যাতিত রাসেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে আদালতে চালান করে। জামিনে বেরিয়ে রাসেল ৯ ও ১৩ আগস্ট আদালতে সদর থানার এসআই কামরুল ইসলাম ও এএসআই লিমন, গ্রাম পুলিশ ছাইদুলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দুই মামলা করেছেন। পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মামলা দুটির তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
দুমকী উপজেলার উত্তর মুরাদিয়া গ্রামের রুহুল আমিন হাওলাদারের ছেলে রেজাউল করিম রাসেল (৩৮) মাদারীপুরের শিবচরে হোটেলের ব্যবসা করেন। তার মাছধরা ট্রলারও রয়েছে। রাসেলের অভিযোগ, তার ট্রলারের মাঝি রফিক শরীফ ও কামাল হাওলাদারের ফোন পেয়ে ১৮ জুলাই সকাল ৯টার দিকে তিনি শ্রীরামপুর বাজারে যান। শ্রীরামপুরের জোড়া কবর নামক স্থানে পৌঁছলে স্থানীয় শাকিল, ওসমান, বাবুল, আশিক ও প্রিন্সসহ ৬-৭ যুবক তাকে একটি পরিত্যক্ত ঘরে আটকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাতভর নির্যাতন করে। এ সময় চক্রটি তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসাবে এক লাখ ৩২ হাজার টাকা নেয়। ৩২ ঘণ্টা পর ১৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি প্রকাশ না করতে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। ২৯ জুলাই সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে এসআই কামরুল ইসলাম ও এএসআই লিমন অভিযোগের সত্যতা পান। তবে এ ঘটনার সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার জুনায়েদ হাসিবের চাচাতো ভাই আশিক মিয়া ও প্রিন্স মিয়াসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা জড়িত থাকায় পুলিশ ভোল পাল্টে ফেলে। চুরির মামলায় তাকে আদালতে চালান করে দেওয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জুনায়েদ হাসিবের দুই চাচাতো ভাইয়ের নাম প্রকাশ্যে এলে পুলিশ নতুন ছক কষতে শুরু করে। তাদের নাম বাদ দিতে রাসেলকে চাপ দেওয়া হয়। রাসেল অস্বীকৃতি জানালে এসআই কামরুল ক্ষুব্ধ হন। ৪ আগস্ট শহরের সিঙারা পয়েন্টের লেকপাড়ে তাকে ডেকে সমস্যা মিটমাট করতে তিন লাখ টাকা দাবি করেন এসআই কামরুল ও এএসআই লিমন। টাকা না দিলে গরু চুরি ও ডাকাতি মামলায় তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখায় তারা। সন্ধ্যায় তাকে থানা হাজতে না রেখে থানা ভবনের পেছনে নিয়ে তারা মারধর করে। এরপর চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ভিডিও বক্তব্য নেয় এবং রাত ১১টার দিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে নিয়ে শেখানো বক্তব্য দিতে বাধ্য করে। এরপর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি এসআই নজরুল ইসলামের বাসায় চুরির মামলায় রাসেলকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৫ আগস্ট আদালতে পাঠানো হয়। এ মামলায় ৪ আগস্ট রাত আড়াইটায় শ্রীরামপুর বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার দেখান এসআই হিরন মোল্লা। ৭ আগস্ট রাসেল জামিনে বের হন। পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ আগস্ট নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে এবং ১৩ আগস্ট এসআই কামরুল ইসলাম ও এএসআই লিমনের বিরুদ্ধে রাসেল মামলা করেন।
এ ব্যাপারে এসআই কামরুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলব। এএসআই লিমন বলেন, চোর ধরে চালান দিয়েছি। সেজন্য মামলা হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এ মামলা অবশ্যই প্রত্যাহার হবে। এ ছাড়াও রাসেলের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও চুরি মামলা আছে। পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম বলেন, মামলাটির বিষয়ে শুনেছি। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। এসব প্রসঙ্গে আওয়ামী নেতা জুনায়েদ হাসিব বলেন, আশিক-প্রিন্স আমার দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই। কিন্তু অপরাধীদের আমি কখনো আশ্রয়-প্রশ্রয় দিই না। এ ঘটনা শোনার পর আমি নির্যাতিতকে সহায়তা এবং পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। মূলত সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই একটি মহল আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। ১৪ আগস্ট শ্রীরামপুর বাজারে গেলে স্থানীয় গণ্যমান্যরা রাসেলকে মারধর ও মুক্তিপণের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। যুগান্তর
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :