ছেড়ে গেছেন ছেলে, ভাঙা ঘরে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে বাবা-মায়ের


Barisal Crime Trace -FF প্রকাশের সময় : আগস্ট ৩০, ২০২৩, ১:৩৭ অপরাহ্ণ /
ছেড়ে গেছেন ছেলে, ভাঙা ঘরে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে বাবা-মায়ের

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছত্তার ফকির (৬৬)। যুবক বয়সে বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় খাদেম হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এখন‌ বয়সের ভারে তিনি এবং তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় কোনো কাজ করতে পারেন না। দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় অসুস্থতায় ভুগছেন তারা।

স্ত্রী আনোয়ার বেগম (৫০) ও তিন সন্তান নিয়ে ছত্তার ফকিরের পাঁচজনের সংসার ছিল। তবে দুটি সন্তান মারা যায় ছোট থাকতেই। বেঁচে ছিল সবার ছোট রুবেল (২৯)। একমাত্র ছেলে রুবেল পাঁচ মাস হলো বাড়ি থেকে চলে গেছেন। তিনি কোথায় আছেন কেমন আছেন জানেন না বাবা-মা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ছোট মাটির ঘরে ভাঙা চাল দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার ঘরের বিছানার এক কোণায় বসে ছত্তার ফকির মনের কষ্টে একটি খাবার প্লেটে তরকারি বিহীন সাদা ভাত পোড়া মরিচ দিয়ে মাখছেন। ইচ্ছা না থাকলেও জোড় করেই ভাত মুখে দিচ্ছেন তিনি। পুরোনো মাটির ভাঙা ঘরে এভাবেই চলছে বৃদ্ধ দম্পতির বসবাস।

পটুয়াখালী সদর উপজেলায় ১২৫২টি পরিবার মুজিববর্ষের ঘর পেলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। আর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষা করে স্বামীর জন্য দুমুঠো ভাত চেয়ে যেদিন আনতে পারেন দুজনে মিলে খান, আর যেদিন ভাত সংগ্রহ করতে না পারেন সেদিন না খেয়ে থাকেন। ব্র্যাক থেকে ছোট একটি গরুর বাছুর পেলেও তা বড় করতে আলেয়া বেগমের অনেক কষ্ট হয়। এখন পর্যন্ত সরকারের দেওয়া বয়স্ক ভাতায় নাম ওঠেনি তার।বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্বামী-স্ত্রী।

প্রতিবেশী মাহবুব মিয়া বলেন, আমাদের প্রতিবেশী ছত্তার ফকির। তিনি অনেক কষ্টে আছেন। তার ছেলে ছিল তিনটা। দুটি ছেলেই মারা গেছে। যে ছেলেটা ছিল সেও কোথায় হারিয়ে গেছে জানেন না। তিনি অনেক অসুস্থ, তার যে সেবা করবে সে রকম কোনো লোক নেই। তার স্ত্রীও বয়স্ক। তিনি গ্রামের মানুষের বাসায় কাজ করে যদি ভাত পান তাহলে খেতে পারেন। অনেক সময় না খেয়ে থাকেন।

প্রতিবেশী আলেয়া বেগম বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে যা পারি তাকে সাহায্য সহযোগিতা করি। আমরাও তো গরিব মানুষ আমাদের পক্ষে তো বেশি সহযোগিতা করা সম্ভব না। তিনি অনেক অসহায় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে দুই টাকা পাঁচ টাকা যা পান সেটা দিয়ে ওষুধ কিনে খান।

প্রতিবেশী সালমা বেগম বলেন, তার একটি ছেলে ছিল। সে পাগল হয়ে কোথায় চলে গেছে তা কেউ বলতে পারে না। ছত্তার ফকির স্ট্রোক করে ২/৩ বছর ধরে বাসায় পড়ে আছেন। আমরা যে সময় যেটা পারি সেটা তাকে দেই।

ছত্তার ফকিরের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা অনেক কষ্টে আছি। কোনো রকম ভাঙাচোরা ঘরে থাকি। আমাদের কামাই রুজি করার মানুষ নেই। একটা ছেলে ছিল, সেও কোথায় চলে গেছে জানি না। আমার‌ স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে চাল-ডাল চেয়ে এনে সেইগুলো খাই। যখন না পাই তখন না খেয়ে থাকি। কতবার মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে গেছি। কতজনরে ঘর দিছে, আমাগো একটা ঘর দেয় নাই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছত্তার ফকির বলেন,দুই বছর ধরে আমি স্ট্রোক করে অসুস্থ অবস্থায় ঘরে আছি, কামাই রুজি নাই। একটা ছেলে ছিল সেও রাগ করে ৫ মাস আগে কোথায় চলে গেছে জানি না। এখন আমার কষ্টের কোনো শেষ নেই। কোনো জায়গা থেকে আমার‌ স্ত্রী চাল পাইলে লবণ দিয়ে খাই, না পেলে না খেয়ে থাকি। তরকারি কিনতে পারি না। এর মধ্যে আমার হার্টের সমস্যা হয়েছে, পানি জমেছে। একমাস পর পর সেই পানি সরাতে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।

মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খালেক বলেন, আমার এলাকায় সবচেয়ে অসহায় গরিব পরিবার হচ্ছে এই সত্তার ফকির। তার ছেলে সন্তান নেই। খুবই কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি এর আগে যারা ছিল তারা তাকে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি। ইতোমধ্যে আমি বয়স্ক ভাতার জন্য অনলাইনে তার হয়ে আবেদন করেছি।

মুজিববর্ষের ঘর কেন পায়নি এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আগের চেয়ারম্যান এবং মেম্বার কেন তাকে ঘর দেয়নি সেটা আমি বলতে পারি না। তবে আমার ওয়ার্ডের মধ্যে সে সবার আগে ঘর পাওয়ার যোগ্য।