রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি : রাঙ্গাবালী উপজেলায় চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ভুয়া কাজের অগ্রগতি দেখিয়ে ৭০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কার্যাদেশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মাথায় ভৌতিকভাবে ৯০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে নির্মাণ কাজ শুরুই করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান এ দুর্নীতি করেছেন।
এলজিইডির উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে একটি প্যাকেজে উপজেলার চালিতাবুনিয়া, চরলক্ষ্মী, পশ্চিম মৌডুবি ও টুঙ্গিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর (বাউন্ডারি ওয়াল) নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৭ টাকার কাজটি পায় পটুয়াখালীর সবুজবাগ এলাকার মানিবুর রহমান সোহেলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৮ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ দেওয়ার ৭ দিনের মধ্যে উপজেলা প্রকৌশলী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চারটি বিদ্যালয়ের কাজের অগ্রগতি ৯০ ভাগ দেখিয়ে বিলের চাহিদা দেন। ২৫ জুন ৭০ লাখ ৫৬ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করা হয়।
চারটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চালিতাবুনিয়া ও চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো কাজই শুরু হয়নি। আর কার্যাদেশের দেড় মাস পর পশ্চিম মৌডুবিতে ১৫ দিন আগে এবং টুঙ্গিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫ দিন আগে কাজ শুরু হয়েছে। কাজের অগ্রগতি টুঙ্গিবাড়িয়া ২৫ শতাংশ ও মৌডুবিতে ১৫ শতাংশ।
ঠিকাদার মানিবুর রহমান সোহেল জানান, ‘আমার ছোট ভাই সুমন কাজটি করে। সেই কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বলতে পারবে। বিল একটা উঠাইছে। কত টাকা জানি উঠাইছে। বিল দিয়া আবার পে-অর্ডার মাধ্যমে তারা (কর্তৃপক্ষ) নিয়া নিছে। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের কাছে জমা আছে। এরকম কি জানি করছে। আমি টাকা ধরিওনি। আপনি একটু ওর (ভাই) সঙ্গে কথা বলেন। ইঞ্জিনিয়ারও বলতে পারবে।’ ঠিকাদারেরছোট ভাই মিজানুর রহমান সুমন জানান, ‘টুঙ্গিবাড়িয়া ও পশ্চিম মৌডুবিতে কাজ চলছে। কাজ শুরু করে আমি একটা বিল নিয়েছি। কত টাকা নিয়েছি-এটা আমার অফিসের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে তথ্য বলতে পারব। আমি তো সব টাকা উঠাইয়া নিয়ে যাইনি। পে-অর্ডার ব্যাংকে দেওয়া আছে, অফিসেই… দেওয়া আছে। হাতে নিয়া আমি কাজ করতেছি না। আমি যতটুকু কাজ করি, ততটুকু টাকাই ছাড় করাই। অফিসও ততটুকু টাকাই দেয়। এরকম না যে, আমি কাজ না করেই টাকা উঠাইছি। আপনি অফিসে গিয়ে কথা বলেন।’
এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, ‘আমরা জুনে কিছু টাকা তুলে পে-অর্ডার কেটে রাখি। আমাদের তিনটি প্যাকেজ ছিল। সেই সময় অন্য কোনো প্যাকেজ আমরা চুক্তি করতে পারিনি। একটি প্যাকেজে মানিবুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এবং আমরা বিল দিতে পারছি। তাদের দুটি কাজ শেষের দিকে। দুটি বৃষ্টিবর্ষার জন্য মাল নিতে পারেনি। আমরা তাকে তো টাকা দেইনি। পে-অর্ডার কেটে রেখেছি। সেক্ষেত্রে এটা তো কোনো ফ্যাক্টর না। সে কাজ করবে বিল নিবে। আমরা টাকা উঠিয়ে রেখেছি। এটা শুধু রাঙ্গাবালী না, সারা দেশেই করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিলের সময় কাজ শুরু হয়নি, কিন্তু আমার তো কোনো উপায় ছিল না। আমি পারতাম টাকাটা ফিরিয়ে দিতে। ৭০ লাখ ৫৬ হলো টোটাল বিল। সেখান থেকে ভ্যাট, আইটি, জামানত বাদে ৫৭ নাকি ৫৮ লাখ আছে। ঠিকাদার ১০ লাখ টাকার মতো বিল পেয়েছে।’
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :