অনলাইন ডেস্ক : অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সদ্যসমাপ্ত বোরো ধান ও চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি উপজেলায় নিম্নমানের ও ভাঙা চাল সংগ্রহের নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া গুদামের ভালোমানের চাল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে অপেক্ষাকৃত কম সময় ভালো থাকবে (কম মেয়াদি) এমন চাল সরকারি গুদামে ঢোকানো হয়েছে।
খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) খয়রাতি সাহায্যের (জিআর) চাল ক্রয় করে গুদাম ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে খাদ্য বিভাগের মাঠপ্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন (এনডিসি) যুগান্তরকে বলেন, সরকারের প্রায় ৬শ গুদাম আছে। সংগ্রহ অভিযানে সব গুদামেই চাল সংগ্রহ করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটছে না তা কিন্তু নয়। যেখানে অনিয়ম হচ্ছে সেখানেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অপরাধের ধরন বুঝে অনেক সময় বিভাগীয় মামলা করা হয়। অনেক সময় শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। কাউকে ছাড়া হয় না।
৯ মে থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। চলে সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ পর্যন্ত। ১৬ লাখ টন সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিছু সময় বাড়িয়ে এর মধ্যে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দিনাজপুর জেলার পুলহাট উপজেলা খাদ্য গুদামে নিম্নমানের চাল সংগ্রহের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই গুদামের চাল বগুড়ার শান্তাহারে কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামে (সিএসডি) সংরক্ষণের জন্য পাঠানো হলে তা গ্রহণ করা হয়নি।
কারণ নিম্নমানের চাল সংরক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। প্রায় ত্রিশ টন চাল শান্তাহার সিএসডিতে না রেখে পুলহাটে ফেরত পাঠানো হয়। ১৭ আগস্ট এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে শান্তাহার সিএসডির ম্যানেজার হারুন আর রশিদ বলেন, প্রথমে নিম্নমানের চাল সংরক্ষণের জন্য পুলহাট থেকে আসে। মান খারাপ দেখে তা ফেরত পাঠানো হয়। পরবর্তীতে চাল পরিবর্তন করে সরকার নির্ধারিত মানের চাল সংরক্ষণের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে।
নিম্নমানের চালের পরিবর্তে কে ভালো মানের চাল সরবরাহ করলেন জানতে চাইলে হারুন আর রশিদ জানান, ঠিকাদার পরিবর্তন করে দিয়েছে। পুলহাট খাদ্য গুদামের ইনচার্জের কোনো দায় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ায় সংগ্রহ অভিযানের সময় নিæমানের চাল ক্রয়ের ঘটনা ঘটেছে। ওই জেলায় রেশনের চাল ক্রয় করে গুদামজাত করা হয়েছে। এছাড়া ওএমএস ও কাবিখার চাল কিনে গুদামজাত করার অভিযোগ রয়েছে। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই অপকর্ম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া জেলার সদর উপজেলায় ভাঙা চালও সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ডিসি-ফুড) মো. বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, আমার জেলায় এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারপরও আমরা কমিটি করে দিয়েছি কোথায় থেকে এ জাতীয় খবর বের হলো তা খতিয়ে দেখতে। তিনি আরও জানান, নতুন অর্থবছরে কাবিখা বা জিআর খাতের চাল এখনও ছাড় হয়নি। নিম্নমানের চাল কোথায় পাব।
তবে ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল রান্নার পর এক বেলার ভাত আরেক বেলা খাওয়া যায় না কেন- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তিনি বলেন, চাল রান্না করে চালের মান দেখে তো আর চাল কেনা হয় না। এটা সরকারি ক্রয় নীতির শর্ত না। তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে বিভিন্ন জেলা থেকে চাল যায়। সেখানে খারাপ চাল যেতে পারে। কুষ্টিয়ায় ওএমএসে দেওয়া চালের মান ভালো।
তিনি আরও বলেন, গুদামের ভেতরে গিয়ে দেখি না। বাহির থেকে যতটুকু দেখা যায় খারাপ চাল সংগ্রহ হয়নি। খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মাঠ প্রশাসনে খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসব অপকর্ম করেন। তারা গুদামের ভালোমানের চাল স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে অপেক্ষাকৃত খারাপ মানের চাল গুদামে ভরেন। এতে প্রতি কেজিতে ৫-৬ টাকা লাভ হয়।
ব্যবসায়ীরা বাজারদরের চেয়ে কম দামে চাল কিনে বেশি দামে চাল বিক্রির সুযোগ পান। পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা ঢুকছে গুদাম কর্মকর্তার পকেটে। আর গুদামজাত করা নিম্নমানের চাল অসহায় গরিব মানুষ টাকা দিয়ে কিনছেন।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :