বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনার পাথরঘাটায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছ কেনা-বেচা হয়। বিভিন্ন জেলায় মাছের চালান পৌঁছায় এখান থেকেই। তবুও বরফ সংকট, ঘাটে পর্যাপ্ত টার্মিনাল না থাকা এবং জায়গা সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়ছেন আড়তদার ও পাইকাররা।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, উপকূলীয় জেলেদের মাছ বিক্রি সহজ করতে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) আওতায় ১৯৮১ সালে ৫ দশমিক ৪০ একর জমিতে বিষখালী নদীর পশ্চিম পাশে নির্মিত হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি।
সেই থেকে বঙ্গোপসাগর, বলেশ্বর, বিষখালী ও পায়রা নদীসহ তৎসংলগ্ন নদ-নদীর মাছ পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে এসে বিক্রি করা হয়। এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সরকার। উপকূলীয় এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এখন আড়তদার রয়েছেন শতাধিক। পাইকারের সংখ্যাও প্রায় ২ শতাধিক। এখান থেকে দেশের প্রায় ২০টি জেলায় মাছ রপ্তানি করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম যশোর, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, রংপুর ও ফরিদপুর উল্লেখযোগ্য।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনদিন ট্রলার-আড়তদার বাড়ায় চাহিদার তুলনায় বিএফডিসির শেডে জায়গা কম হয়ে গেছে, ফলে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে মাছ কেনা-বেচা ও প্যাকেজিং করছেন ব্যবসায়ীরা। ঘাটে মাছ নামাতে ও প্যাকেজিং করতে ভোগান্তি হচ্ছে। অতিরিক্ত মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যাপ্ত বরফ উৎপাদন হচ্ছে না কলগুলোতে, তাই ট্রলারেই পচে যাচ্ছে মাছ। এদিকে অবতরণ কেন্দ্রে মাত্র দুটি টার্মিনাল আছে, এগুলোতে সর্বোচ্চ ৮-১০টি ট্রলার থাকতে পারবে। কিন্তু প্রতিদিন ঘাটে আসছে ৫০-৬০টি ট্রলার। যেগুলোকে অন্য কোথাও নোঙর করে রাখতে হয়। ফলে মাছ খালাস হতে বিলম্ব হয়।
এসব সমস্যার সমাধান হলে লাভবান হবে ব্যবসায়ীরা, রাজস্বের পরিমাণও বাড়বে। কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে ট্রলার ও জেলের সংখ্যা। কিন্তু বাড়ানো হয়নি বিএফডিসির টার্মিনাল। দুটি টার্মিনালে লোড লেগেই থাকে। এ কারণে মাছভর্তি ট্রলার ঘাটে ভিড়তে ও খালাস করতে আমাদের অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অপেক্ষা করতে করতে অনেক সময় মাছ পচে যায়। তাই মাছ সংরক্ষণ করতে বাড়তি বরফ কিনতে হচ্ছে। আবদুল হাকিম নামে এক পাইকার বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ মাছের ব্যবসা করি।
আড়তদারদের থেকে ইলিশ কিনে ঢাকা, রাজশাহীসহ কয়েকটি জেলায় পাঠাই। ব্যবসার শুরুতে পাইকার-আড়তদার কম থাকায় কেন্দ্রের ভবনে একটু জায়গা পেতাম। এখন ব্যবসার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় মাছ প্যাকেজিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সুলতান আলী বলেন, জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে দেশের অন্তত ৪০টি জেলায় মাছ বিক্রি করি। মাছ কিনে ওজন করতে, বরফ দিয়ে আবার প্যাকেট করতে প্রচুর জায়গার দরকার হয়। এরপর সেসব মাছ ট্রাকে উঠাতেও প্রচুর স্থান দরকার।
কিন্তু স্থান সংকটে এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তাই ভবন দিতে দেরি হলেও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ১০টি টলঘর নির্মাণ করে দিলে উপকৃত হবে ব্যবসায়ীরা। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন বলেন, রাজস্ব আমরা সময় মতো দিয়ে দেই। এই অবতরণ কেন্দ্রে থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। কিন্তু একাধিকবার আমাদের সমস্যার কথা লিখিতভাবে অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের কাছে জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি।
সমস্যার সমাধান হলে আরও ব্যবসায়ী ও সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়তো। ভোগান্তির কারণে এখানে অনেকেই ব্যবসা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জিএম মনসুর শিকদার বলেন, বিএফডিসিতে অকশন শেড ও প্যাকেজিং শেড রয়েছে। তবে পাইকাররা নিয়ম মেনে কাজ করেন না। পল্টুন ও জায়গার ব্যাপারে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, পাথরঘাটার এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ থেকে ৬ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। জেলেদের বিক্রি করা মাছের প্রতি ১০০ টাকায় ১ টাকা ২৫ পয়সা রাজস্ব পায় সরকার। গত মাসে এখানে ৪৪০ মেট্রিক টন মাছ কেনা-বেচা হয়েছে। সেখান থেকে ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। চলতি মাসে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন মাছ বেচাকেনা হয়েছে, এখান থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৬ লাখ টাকা।
Map plugins by Md Saiful Islam | Android zone | Acutreatment | Lineman Training
আপনার মতামত লিখুন :