নিজস্ব প্রতিবেদক// বরিশাল মহানগরীতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র শিশু হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরুর দীর্ঘ ৮ বছর পরেও চালু হলনা। ৩০ মাসে সম্পন্ন করার শর্তে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ শিশু হাসপাতালটির চারতলা ভবনটির নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ের ৫ বছর পরেও তা সম্পূর্ণ হয়নি। তবে ১০তলা ভীতের অপর ৪ তলার মূল ভবনটির অবকাঠামো নির্মাণকাজ গত বছর ডিসেম্বরে ঠিকাদার শেষ করার পরে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ভবন সহ অভ্যন্তরীণ রাস্তার কাজও শেষ হয়েছে। কিন্তু ট্রান্সফর্মারসহ আরো বেশকিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপনের অভাবে হাসপাতালটি পরিচালনক্ষম করা সম্ভব হচ্ছে না।
পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনের অভাবে জনবল মঞ্জুরী সহ ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ এবং তা স্থাপন এখনো অনিশ্চিত। ফলে কবে নাগাদ দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এ শিশু হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা সহায়তা মিলবে তা সবার কাছেই অজ্ঞাত।
বরিশাল গণপূর্ত বিভাগ ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা ব্যয়ে নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে ৩০ মাসের মধ্যে হাসপাতাল ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন সহ পুরো হাসপাতালের অবকাঠামো সমুহ নির্মান কাজের চুক্তি সম্পাদন করে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ বছর পরে গত বছরের মাঝামাঝি নাগাদ তা ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
তবে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কে.এস.বি.এল-এস.আর.আর জেভির পক্ষ থেকে ‘ হাসপাতলটির জমি নিয়ে জটিলতা সহ নিচু জলাশয় হওয়ায় তা ভড়াট করে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে’ বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত অধিদপ্তরের মতে, এসব অভিযোগে আড়াই বছরের কাজ ৭ বছরেও শেষ করতে না পারার বিষয়টি সঠিক নয়। শুধুমাত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও উদাশিনতায় বছরের পর বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র শিশু হাসপাতালটির নির্মান কাজ শেষ না হবার অভিযোগ করা হলেও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে তাদের পাওনার প্রায় পুরোটাই পরিষোধও করা হয়েছে। এমনকি ইতোপূর্বে কয়েকবারই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকগন নির্মানাধীন এ হাসপাতাল ভবন পরিদর্শনও করে ‘খুব শিগ্রই হাসপাতালটি চালু করা হবে’ বলে আশ্বস্ত করে গেছেন।
তবে প্রায় ৮ বছর ধরে চলমান (?) ১০ তলার ভীতের ওপর ৪ তলা হাসপাতাল ভবন ও সাব-স্টেশন ভবনের নির্মান কাজ গত ডিসেম্বরে সম্পন্ন হলেও ট্রান্সফর্মার সহ কিছু ইলেক্ট্রেক্যাল মেটিরিয়ালের অভাবে হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছেনা। এসব সরঞ্জামাদি সংগ্রহ ও সংস্থাপন সহ সংযোজনে মাত্র দু মাস সময় প্রয়োজন হলেও তহবিল সংকটে সরবারহকারীদের চাপ দেয়ার সুযোগ নেই বলে জানা গেছে। গনপূর্ত অধিদপ্তরের একটি সূত্রের মতে, মাত্র সাড়ে কোটি টাকার তহবিল সংস্থান হলে বরিশাল শিশু হাসপাতালটি নির্মান কাজ পরিপূর্ণ সম্পন্ন সহ তা পরিচালনক্ষম করা সম্ভব।
অপরদিকে ২০১৫-১৬ সালে অনুমোদিত ২শ শয্যার এ হাসপাতালটির জনবল মঞ্জুরী সহ তার নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয়নি। পাশাপাশি বিশেষায়িত বরিশাল শিশু হাসপাতালটির ওয়ার্ড, অস্ত্রপচার কক্ষ, পোষ্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড, ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট সহ অন্যন্য আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সমুহ স্থাপনের সরঞ্জামাদি সংগ্রহেরও তেমন কোন উদ্যোগ নেই।
এ ব্যপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ঞ মন্ডলের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, নিয়মনুযায়ী গনপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতাল ভবন হস্তান্তর করলেই জনবল মঞ্জুরী ও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। হাসপাতাল সরঞ্জামসমুহও একই সাথে সংগ্রহ ও স্থাপন কাজ শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ এসব কাজ সম্পন্ন করে শিশু হাসপাতালটি স্বাস্থ্য সেবা দেবে, তা তিনি বলতে পারেন নি। তারমতে বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের এখতিয়ারভ’ক্ত।
তবে বিগত সরকারের সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে একবার শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচলককে শিশু হাসপাতালটির দায়িত্ব বুঝে নিতে বলা হলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
আব্দুর রব সেরনিয়াতের নাতি ‘শহীদ সুকান্ত বাবু’র নামে নির্মানাধীন এ শিশু হাসপাতাল’র প্রথম তলায় জরুরি বিভাগ ছাড়াও রেডিওলজি, ডায়াগনস্টিক ও ডিসপেন্সারি থাকার কথা। আউটডোর থাকবে দ্বিতীয় তলায়। সাথে রেডিও থেরাপি, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি বিভাগ, তৃতীয় তলায় জেনারেল বেড, নিউনেটাল আইসিউ, অপারেশন ব্লক, কনফারেন্স রুম, পোষ্ট অপারেটিভ ব্লক এবং চতুর্থ তলায় প্রশাসনিক ব্লক, সাধারণ শিশু ওয়ার্ড, নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট, ক্যান্টিন, অপারেশন থিয়েটার ও কনফারেন্স রুম স্থাপনের কথা রয়েছে।
বর্তমানে ১ হাজার শয্যার বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্বকৃত ৩৬ শয্যার ওপর এখনো সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের শিশুচিকিৎসা সেবা (?) নির্ভরশীল। ফলে প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার পাঁচ থেকে ১০গুন পর্যন্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে পুরো হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমই ভেঙে পড়ছে। শীত মৌসুমে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপে হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতেও পা রাখা দায় হয়ে ওঠে। এরসাথে গত কয়েক বছর ধরে শিশুদের ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ার রোগীদের মিছিল সামাল দিতে এ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অবস্থা সব বর্ণনার বাইরে চলে যাচ্ছে।
ফলে একই শয্যায় দুজন ছাড়াও বিপুল সংখ্যক অসুস্থ শিশুকে মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ঐসব রোগীদের ভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এমনকি হাসপাতলটির শিশু বহির্বিভাগেও সারা বছরই রোগীর দীর্ঘ লাইন লেগে আছে। এপরিস্থিতি থেকে দক্ষিণাঞ্চলের শিশুদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষে সরকার বরিশালে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির নির্মান কাজ শুরু করলেও বিগত ৮ বছরেও তা শেষ হয়নি।
উপরন্তু হাসপাতালটির জনবল কাঠামো অনুমোদন, নিয়োগ এবং ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপন্টে সংগ্রহ সহ তা স্থাপনের বিষয়গুলো নিয়ে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তায় দক্ষিণাঞ্চলের শিশুরা বরিশাল শিশুহাসপাতাল থেকে কবে চিকিৎসা সুবিধা লাভ করবে তা সবার কাছেই অজ্ঞাত।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.