নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে নিজেকে তুলে ধরার প্রবণতা যেন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্রনিক সেলফাইটিস নামক এক ধরনের মানসিক সমস্যা ভোগেন অতিরিক্ত সেলফি ওঠানো ব্যক্তিরা।
যেখানে অজস্রবার সেলফি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট না করে যেনো শান্তি পায় না। বিশেষজ্ঞরা একে সেলফি সিনড্রোমের মারাত্মক ধাপ বলছেন। এর ফলে ‘সেলফি এলবো’ নামক সমস্যাও হয় যা কনুইয়ের জয়েন্টে ব্যথা, জ্বালাপোড়া ও চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
তবে এসবের চেয়েও ভয়ানক হচ্ছে সেলফি তোলাকে ঘিরে বাড়তে থাকা প্রাণহানি। স্মৃতি ধরে রাখার এই চেষ্টায় বহু মানুষ হারাচ্ছেন নিজের জীবন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য বারবার ল’ ফার্ম গুগল নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ২০১৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে।
গবেষণা বলছে, বিশ্বজুড়ে সেলফি-সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ভারতে। দেশটিতে গত এক দশকে ২১৭টি সেলফি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২১৪ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৫৭ জন। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় সহজ প্রবেশাধিকার যেমন রেললাইন, পাহাড়চূড়া, উঁচু ভবন এবং সামাজিক মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হওয়ার আগ্রহই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৪৫টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। রাশিয়া রয়েছে তৃতীয় স্থানে, যেখানে প্রাণ গেছে ১৮ জনের। পাকিস্তানে মারা গেছেন ১৬ জন এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১৩ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, সেলফি তুলতে গিয়ে ছাদ, পাহাড়চূড়া বা উঁচু স্থাপনা থেকে পড়ে যাওয়াই মৃত্যুর প্রধান কারণ, যা মোট মৃত্যুর ৪৬ শতাংশ। সম্প্রতি ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে হোটেলের অষ্টম তলা থেকে পড়ে এবং এথেন্সে ঝোড়ো হাওয়ায় গির্জার পাশে সেলফি তুলতে গিয়ে দুজন পর্যটক প্রাণ হারান।
বাংলাদেশেও সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর হার কম না। ট্রেনের ধাক্কা বা পাহাড়ের চূড়া থেকে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যু ঘটছে অহরহ। এছাড়াও সেলফি আসক্তিতে সামাজিক ও পারিবারিক অনিষ্টতার প্রভাবও বাড়ছে দিনদিন।
সেলফি এখন শুধুই স্মৃতি নয়, এক ভয়ানক আসক্তি। এটা যেখানে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ হচ্ছে, সেখানে প্রাণহানির ঘটনাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিজেকে তুলে ধরার এই প্রতিযোগিতা আমাদের জীবনকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এটা ভাববার সময় এখনই।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.