প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২০, ২০২৫, ৩:৫১ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ৫:২৮ অপরাহ্ণ
অবৈধ জালে শ্বাসরুদ্ধ প্রাণবন্ত জলপথ

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিবেদক॥ ভোলার চরফ্যাশন ও লালমোহন উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া খাল—এক সময়ের ব্যস্ত নৌপথ ও দেশি মাছের ভাণ্ডার। সন্ধ্যা নামলেই খালের দুই তীরে জেলেদের জাল টানার দৃশ্য ছিল নিত্যদিনের। সেই মাছ পৌঁছাত গ্রামীণ হাটে, আর খালজুড়ে জমত প্রাণচাঞ্চল্য। আজ সে খাল যেন নিঃশ্বাস নিতে হিমশিম খাওয়া এক রোগীর মতো; অবৈধ জালের দাপটে তার প্রাণপ্রবাহ ক্রমেই স্তিমিত হয়ে আসছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালের সর্বত্রই টানানো হয়েছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, সুতিজাল, বিহুন্দি, ভেসাল ও চায়না রিং জাল। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে, মাছের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় প্রবীণ জামাল উদ্দিন জানান, এক সময় ট্রলার, স্টিমার, নৌকা চলত এ খালে। বর্ষার পানিতে বোয়াল, গজার, শোল, পাবদাসহ দেশি প্রজাতির মাছ ভিড় জমাত। সে মাছ ধরে পরিবার চালাত মানুষ। শুধু জীবিকা নয়, মাছ ধরা ছিল উৎসবের মতো। আজ সবকিছু হারিয়ে গেছে।
স্থানীয় নুরনবী বলেন, এখন সর্বত্র জাল পাতা। ছোট পোনা থেকে শুরু করে ডিমওয়ালা মাছ পর্যন্ত ধরা পড়ছে। ফলে মাছের প্রজনন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সামনে হয়তো দেশি মাছ একেবারেই বিলীন হয়ে যাবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মৎস্যজীবী সেলিম মাঝি বলেন, আমরা চাইলে দেশি মাছ ধরতে পারি না। ডিম ছাড়ার আগেই মাছ মরে যায়। আমাদের সন্তানরা হয়তো শুধু বইয়ে বা গল্পে দেশি মাছের নাম শুনবে।
অবৈধ জালের প্রভাব শুধু মাছেই সীমাবদ্ধ নয়। স্থানীয় কহিনুর বেগম জানান, জাল বসানোর কারণে পানির স্রোত বন্ধ হয়ে গেছে। খালজুড়ে কচুরিপানা জমে থেকে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। চারপাশে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে, বাচ্চারা বারবার অসুস্থ হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, চরফ্যাশনের বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ জাল। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা চালাচ্ছেন। মৎস্যজীবীরা এসব জাল কিনে এনে খালে মাছ শিকারে নামছেন, আর ধ্বংস হচ্ছে খালের জীববৈচিত্র্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেতুয়া খালের প্রাণ ফেরাতে হলে নিয়মিত অভিযান, জনগণের সচেতনতা এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা অপরিহার্য। নইলে এ খাল থেকে দেশি মাছ একেবারেই হারিয়ে যাবে, যা দেশের সামগ্রিক মৎস্যসম্পদেও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে শুধু প্রশাসনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়; জনগণের সহযোগিতাই হতে পারে এ খাল বাঁচানোর মূল শক্তি।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি জানান, আমরা ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ জাল জব্দ করেছি এবং ধ্বংস করেছি। খাল রক্ষায় আরও জোরালো অভিযান চলবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.