নিজস্ব প্রতিবেদক// প্রয়োজনীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না করে অপরিকল্পিতভাবে মহাসড়ক ও কালভার্ট নির্মাণে বরিশালের চরকাউয়া এলাকার সহস্রাধিক একর ফসলি জমি বছরের প্রায় ৯ মাস পানির তলায় থাকার বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে কয়েক শত কৃষক রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছেন। কৃষকসহ প্রায় চার শত এলাকাবাসী রবিবার দিনের প্রথম ভাগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেনের দপ্তরে হাজির হয়ে তাদের দুর্দশার কথা জানান। এ ব্যাপারে প্রায় চার শত কৃষকের স্বাক্ষরসম্বলিত একটি স্মারকলিপিও জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জেলা প্রশাসক সবার দুর্দশার কথা শুনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে দুপুরের মধ্যে ওই এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন নিজেও রবিবার বিকেলেই সরেজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, খুলনা/মোংলা–বরিশাল–ভোলা–চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে সড়কটির চরকাউয়া এলাকায় প্রয়োজনীয় কালভার্টসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি না করায় বিশাল এলাকায় বৃষ্টির পানি ও পাশের কীর্তনখোলা নদীর জোয়ারের পানি বছরের ৯ মাসেরও বেশি সময় আটকে থাকছে। ফলে অন্তত ১ হাজার একর জমি বছরের ৯ মাসের বেশি সময় অনাবাদি থাকছে। কয়েক হাজার পরিবার চরম মানবিক বিপর্যয়ের কবলে পড়েছেন। এমনকি ৩টি ফসলের দুটিই হারিয়ে অনেক পরিবারেই বছরের বেশিরভাগ সময়ই উনুন জ্বলছে না। গত ২৪ আগস্ট এ ব্যাপারে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন দৈনিক ইনকিলাবের অনলাইন সংস্করণে এবং পরে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এমনকি খুলনা–বরিশাল–ভোলা–চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল–ভোলা অংশের ‘চরকাউয়া–জিরো পয়েন্ট’ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য নির্মিত প্রায় ৭০ ফুট দীর্ঘ কালভার্টটির নকশায় ত্রুটির কারণেও বিশাল এলাকায় জলাবদ্ধতা এখন প্রায় সারা বছরের সঙ্গী। কালভার্টটির উচ্চতা মহাসড়কের নিচে থাকায় বিশাল এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি মহাসড়কের চেয়ে নিচু ওই কালভার্টে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে কচুরিপানাসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও জঞ্জালও আটকে পুরো ফসলি জমিই তার চরিত্র হারিয়েছে। কালভার্টটি নির্মাণকালে এলাকার কৃষিজীবীরা বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছেন, কিন্তু তাদের কথা আমলে নেয়নি কেউ।
ফলে ওই এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে কালিখোলা পর্যন্ত সহস্রাধিক একর জমি বছরের ৯ মাসই পানির তলায় থাকছে। খরিফ-১ ও খরিফ-২ মৌসুমে ওই বিশাল এলাকায় আউশ ও আমন ধানের আবাদ বন্ধ রয়েছে গত প্রায় এক যুগ ধরে। পুরো বর্ষা মৌসুমজুড়ে এলাকাটি পানির তলায় থাকছে। অনেক বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বর্ষা মৌসুমে পানিতে নিমজ্জিত থাকছে। ভারী বর্ষায় এলাকার ঐতিহ্যবাহী এ আর খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির খেলার মাঠও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে নিমজ্জিত হচ্ছে। একের পর এক ফসলি জমিজুড়ে এখন কচুরিপানা আর জঙ্গলের স্তুপ।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বরিশাল সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, এ মহাসড়কটি নির্মাণকালে মূল সড়ক অনেক নিচু ছিল। সড়ক অধিদপ্তরই পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ওই এলাকায় প্রথম কালভার্ট নির্মাণ করেছে। তবে মহাসড়কটিতে আরও কালভার্ট নির্মাণ প্রয়োজন হলে আমরা তা দেখব। এ লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণে খুব শিগগিরই মাঠ পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.