নিজস্ব প্রতিবেদক// দেশের সড়ক ও মহাসড়কে আগস্ট মাসজুড়ে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা আবারও সামনে এসেছে। বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪২৮ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৭৯১ জন। এদের মধ্যে নারী ৬৮ জন এবং শিশু ৩৪ জন।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মাসিক দুর্ঘটনা-ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্টে মোট ৪৫১টি সড়ক দুর্ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ১৪৪টি দুর্ঘটনায় ১৩২ জন চালক ও আরোহী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। একই সময়ে পথচারী নিহত হয়েছেন ৮৩ জন এবং যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫২ জন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিহতদের মধ্যে বাসযাত্রী ৩০ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি-লরির আরোহী ২৭ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্সে ২১ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী ৯৭ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, টমটম, মাহিন্দ্র) যাত্রী ৩৩ জন এবং বাইসাইকেল আরোহী ৫ জন।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি জানায়, আগস্টে সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্যে ২১৪টি ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ১৩৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৪২টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৬০টি শহরের সড়কে। এর মধ্যে ৯০টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৮৫টি পথচারীকে চাপা দেওয়া বা ধাক্কা লাগা, ৬২টি পেছন থেকে আঘাত এবং সাতটি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এ বিভাগে ১১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১১৭ জন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে ১৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় ৩৬টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম প্রাণহানি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে—৬টি দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় নথিভুক্ত হয়েছে ৩৭টি দুর্ঘটনা, যাতে নিহত হয়েছেন ১৫ জন এবং আহত হয়েছেন ৪৬ জন।
সড়ক সুরক্ষা সংস্থাটি শুধু সড়ক নয়, নৌপথ ও রেল দুর্ঘটনার তথ্যও প্রকাশ করেছে। আগস্টে ১৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত, ১৭ জন আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া ৩৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে—ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের মানসিকতা ও অদক্ষতা, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, স্বল্পগতির যানবাহনের মহাসড়কে চলাচল, তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সমাধানের পথ হিসেবে সংস্থাটি সুপারিশ করেছে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ জোরদার করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা সড়ক নির্মাণ, মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, নৌ ও রেলপথ সংস্কার করে সড়কের ওপর চাপ কমানো এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.