
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে কবির তালুকদার, তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচী বেগম এবং এলাচী বেগমের ছেলে সুজন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কবিরর তালুকদার প্রায় ৩০ বছর আগে মহিমা বেগমকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার চলছিল। তবে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন কবির।
মেয়ে রেখা বেগমকে বিয়ে দেওয়ার পর কবির মেয়ের শাশুড়ি এলাচী বেগমের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে রেখা বাবা ও তার শাশুড়িকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে প্রতিবাদ করে। ফলে শাশুড়ি এলাচী বেগম এবং স্বামী সুজন রেখার ওপর নির্যাতন শুরু করেন।
একপর্যায়ে রেখা ক্ষোভে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার চার বছরের মাথায় প্রথম স্ত্রী মহিমার অমতে মৃত মেয়ের শাশুড়ি এলাচী বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন কবির। তবে বিয়ে করলেও কবির প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিতে পারেননি।
আর এ কারণেই প্রথম স্ত্রী মহিমা বেগমকে বিভিন্ন দাবিতে নির্যাতন করতে শুরু করে করিব তালুকদার। একপর্যায়ে কবিরসহ দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচী বেগম ও তার ছেলে সুজন মহিমা বেগমকে বিদ্যুতের শক দিয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন।
এরপর ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর শুক্রবার সকালে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা মহিমা বেগমের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের শক দিয়ে হত্যা করেন। পরে এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার মহিমা বেগমের ছেলে হেলাল তালুকদার বাদী হয়ে পাথরঘাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত ওই মামলায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে কবির তালুকদার, তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচী বেগম এবং তার ছেলে সুজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন আদালত।
মামলার বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, ঘটনার দিন আমার অসুস্থ শ্বশুরকে দেখতে যেতে বলেন আমার বাবা কবির তালুকদার। পরে আমার ছোট ভাইসহ আমি সেখানে গেলে খবর পাই বিদ্যুতের শক লেগে আমার মা মারা গেছেন।
তবে বাড়িতে গিয়ে শুনতে পাই মাকে বিদ্যুতের শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে এ ঘটনায় মামলা করলে আদালত আমার বাবাসহ তিনজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। মায়ের হত্যায় জড়িত আমার বাবার ফাঁসির আদেশ হলেও সঠিক বিচার হওয়ায় আমি খুশি। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই ছেলে হয়ে আর কারো যেন কখনো কোনো বাবার বিরুদ্ধে যেতে না হয়।
এ বিষয়ে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রনজুয়ারা সিপু বলেন, ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিজ্ঞ আদালতে বিভিন্ন সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হওয়ায় আদালতের বিচারক আসামিদেরকে মৃত্যদণ্ডের আদেশ প্রদান করেছেন। এছাড়া প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এ রায়ে বিজ্ঞ আদালতের প্রতি আমি সন্তুষ্ট।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.