অনলাইন ডেস্ক: বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্তকে বদলী করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে বদলী করে কুড়িগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে পাঠানো হয়েছে।
তবে বদলীর আদেশ স্থগিত করতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন তিনি। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, নিজের অনুসারী কিছু শিল্পী আর শিল্পকলার কর্মী দিয়ে মানববন্ধন এবং স্মরকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। খোদ শিল্পকলায় বসে এসব পরিকল্পনা করছেন নানান অনিয়মের অভিযোগ ওঠা অসিত বরণ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে যোগ দেন অসিত বরণ দাশগুপ্ত। বরিশালে যোগ দেওয়ার পরপরই নানান বির্তকিত কর্মকান্ডে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। নিজে কালচারাল কর্মকর্তা হয়েও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার নোটিশ দেন। এছাড়া ভূয়া বিল-ভাউচারের দাপ্তরিক নথি ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বরিশাল শিল্পকলায় যোগদানের দুইদিন পরে অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি নিজের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আড়ম্বর আয়োজন করেন। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভার কথা উল্লেখ সেই অনুষ্ঠানে ৩৫ হাজার টাকার বি করেন।
শিল্পকলার প্রযোজনাভিত্তিক নাট্যকর্মশালার টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রায় ৫ লাখ টাকা বাজেটের ওই মঞ্চ নাটকে ১৭ জন শিল্পীর ১৫ দিনের খাওয়া ও মহড়ার খরচে বরাদ্দ আসে।
নাট্যকর্মী মাহফুজ নুসরাত বলেন, কর্মশালা শুরুতেই আমাদের দাবি ছিল সরকারি বরাদ্দ স্বচ্ছভাবে ব্যয়ের এবং এই টাকা যেহেতু সরকার দিয়েছে তার হিসেব নাট্যকর্মী হিসেবে আমিও জানতে পারি। নাটকে জেলা পর্যায়ে কাজের পারিশ্রমিক সঠিকভাবে পরিশোধ করেছেন। তবে খাবারের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় হয়নি। আমাদের বাজেট অনুসারে খাবার দেওয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, প্রযোজনা ভিত্তিক মায়াজাল নাটকটি বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে হয়েছে। এরমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে প্রদর্শনীর পর আমাদের ৭২৫ টাকা দিয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে কোন টাকা দেননি। তিনদিন ব্যাপী নাট্যৎসবে আমাদের ভলান্টিয়ার হিসেবে তিনি রেখেছেন, টিকেট বিক্রি করিয়েছেন। কালচারাল কর্মকর্তা বলেছেন, ভলান্টিয়ার হিসেবে সম্মানি দিবেন, যে যত টিকেট বিক্রি করতে পারবো তার পার্সেন্টিজ দিবেন। কিন্তু কোন টাকাই আমাদের দেননি। আমরা যখন এইসব বিষয়ে জানতে চেয়েছি তিনি বলেছেন, সব টাকা শিল্পকলা একাডেমি ফেরত নিয়ে গেছেন।
একই নাটকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, আমার কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা সাক্ষর করিয়ে রাখলেও কোন টাকা আমাকে দেওয়া হয়নি।
নাট্যকর্মীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পকলা একাডেমির মলিনায়তন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নাট্যদল ব্যতীত অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া প্রতি শিফট ২৪ হাজার টাকা। শিফট অনুযায়ী অর্থাৎ তিন ঘণ্টার অধিক হলে প্রতিঘণ্টার জন্য বাড়তি ৩ হাজর ৬শ টাকা প্রদান করতে হয়।
অসিত বরণ যোগদানের পর ১৫ জানুয়ারি প্রাণ আরএফল ও ১৯ জানুয়ারি প্রাণ কনফেকশনারীর কাছে ভাড়া দেন। ১৯ জানুয়ারির ৫৯ হাজার টাকা ভাড়া সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। ১৫ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে প্রাণ কনফেকশনারীর কাছ থেকে ৩১ হাজার টাকা গ্রহণ করলেও মাত্র ২৪ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। ২০ জানুয়ারি অপসোনিন ফার্মার কাছে ভাড়া দেয়া হয়। তাদের ভাড়া বাবদ আদায় করা হয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। কিন্তু জমা দেয়া হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টাকা। ২৪ ফেব্রুয়ারি কিশোর ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ নেওয়া হয়েছে ৩১ হাজার টাকা। সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। ৫ মার্চ আনসার ভিডিপির একটি অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৩১ হাজার টাকা, জমা দেখানো হয়েছে ২৪ হাজার টাকা।
কালচারাল কর্মকর্তার সাক্ষরিত আরো কিছু বিল ভাউচারের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সুরকার আলতাফ মাহমুুদ স্মরণানুষ্ঠানের সঞ্চালক জিয়াউর রহমান সম্মানিবাবদ ৩ হাজার টাকা প্রদানেরনেথি পাওয়া গেলেও সঞ্চালককে দেওয়া হয়েছে একহাজার টাকা। ৩ জন যন্ত্র শিল্পীকে দেয়া হয়েছে ১ হাজার টাকা করে। অথচ তাদের প্রত্যেকের নামে দেখানো হয়েছে ৫ হাজার টাকা প্রদান। এমনকি আলোচক সম্মানী বাবদ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিষদ সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তীকে ২ হাজার ৫শ টাকা দেয়া হয়েছে।
তবে তিনি জানিয়েছেন, সুরকার আলতাফ মাহমুুদ স্মরণানুষ্ঠান থেকে আমি কোনো টাকা গ্রহণ করিনি।
বেলস পার্কে ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সাধুমেলায় সার্বিক খরচ দেখানো হয় ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় শিল্পী, যন্ত্রশিল্পীদের সম্মানী ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রদান দেখানো হয়। মনির মোল্লা, স্বপন তালুকদার, তানজিল রহমান, আসাদ হাওলাদার, অরবিন্দু নাগ, তপন নাহা সহ ৭ জন যন্ত্রশিল্পীর প্রত্যেকের নামে ৪ হাজার টাকা করে বিল করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের দোতারা বাদক আসাদ হাওলাদার বলেন, আমাকে চার হাজার টাকার সাক্ষর করিয়ে ২ হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য যন্ত্রশিল্পীরাও আমার মতই টাকা পেয়েছে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সাহিদা আক্তারকে দেয়া হয়েছে ২ হাজার টাকা। তার নামে বিল কর হয়েছে ৫ হাজার টাকা।
প্রতিমাসের শেষ সপ্তাহে অসিত বরণের নিজ উদ্যোগে শ্রোতার আসর নামে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। ২৮ মে প্রথম শ্রোতার আসর শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ২০ জন। যাদের সামুছা ও মিস্টি খাওয়ানো হয়। কিন্তু বিল করা হয় ৫০ জনের বিরিয়ানির খরচ। একটি ছোট্ট পিভিসি ব্যনারের বিল দেখানো হয় ৭ হাজার টাকা। ফুলের বাকেট বাবদ ২ হাজার টাকা। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান দেখিয়ে সরকারি টাকা তসরুপের অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা অসিত বরণ দাশগুপ্ত বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। তিনি জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চেয়েছেন আমাকে বদলী করেছেন। এখনো কাগজ হাতে পাইনি।
এসব বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে অনিয়মের একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ- মোঃ অনিক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৪২৩৫৩২
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৮৯-শিকদার ভবন, পোর্ট রোড ভুমি অফিসের বিপরীতে, বরিশাল -৮২০০।
ই-মেইল: barishalcrimetrace@gmail.com
Copyright © 2025 Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস. All rights reserved.