
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সেক্টরে আবার বিপরিত পথে হাঁটছে বিমান। ২৩ অক্টোবর থেকে কার্যকর শীতকালীন সময়সূচিতে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিমান বন্দর, বরিশাল’র সাথে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান-এর নতুন সময়সূচী নিয়ে যাত্রীদের মাঝে নুতনকরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সেক্টরের জন্য ৫টি উড়জাহাজ থাকার পরেও গত ২৫ জলাই থকে পদ্মা-মেঘনা’র পশ্চিম তীরের বরিশাল, রাজশাহী ও যশোর সেক্টরে রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিসেবা বন্ধ করে দেয় বিমানর বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
অজুহাত হিসেবে উড়জাহাজ সংকটককেই দায়ী করা হলেও বিষয়টি নিয়ে সরকারের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে গত ৮ আগষ্ট থেকে বরিশাল ও রাজশাহী সেক্টরে অতি সিমিতকারে ফিরে আসে বিমান।
কিন্ত বিমান কর্তৃপক্ষের একান্ত অনিচ্ছার ঐ সিদ্ধান্তে বরিশাল সেক্টরে সপ্তাহে ৩দিনে স্থলে মাত্র দুটি ফ্লাইট চালু করা হয়। তবে তাও যাত্রী বান্ধব নয়। বরিশাল সেক্টরের যাত্রীদের কাছে বৃহস্পতিবার বিকেলে ও রোববার সকালের ফ্লাইটে সব সময়ই চাহিদা বেশী থাকলেও গত ৮ আগষ্ট থেকে বিমান কতৃপক্ষ শুক্রবার ও রোববার সকালে দুটি ফ্লাইট চালু করে।
কিন্তু বরিশাল সেক্টরের যাত্রীদের তরফ থেকে বার বারই নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার দাবীর পাশাপাশি বৃহস্পতি ও শণিবার বিকেলে এবং রোববার সহ অন্য দিনগুলোতে সকালে ফ্লাইট পরিচালনের দাবি জানান হচ্ছে। যাতে যাত্রীরা ঢাকা ও বরিশালের উভয়প্রান্তে পৌছ দাপ্তরিক কাজ সারতে পারেন।
কিন্তু আগামী ২৩ অক্টোবর থেকে কার্যকর শীতকালীন সময়সূচিতে ঢাকা থেকে বর্তমানের সকাল সোয়া ৮টার পরিবর্তে সকাল সাড়ে ১০টায় এবং বরিশাল থেকে সকাল সাড়ে ৯টার পরিবর্তে সকাল পৌণে ১২টায় ফ্লাইট পরিচলনার তফসিল ঘোষনা করা হয়েছে। যা মোটেই যাত্রী বান্ধব নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর ফলে যাত্রীরা কোন প্রান্তে পৌছেই দাপ্তরিক কোন কাজ করতে পারবেন না। এমনকি একজন যাত্রীকে ঢাকা বিমান বন্দর হয়ে মতিঝিলে পৌছতে বিকেল হয়েও যেতে পারে বরে মনে করছে সাধারণ যাত্রীগন।
ফলে শীতকালীন সময়সূচিতে বরিশাল সেক্টরে বিমান ফ্লপ করারও লাশংকা করছেন একাধিক যাত্রী। আর যাত্রীদের অভিযোগ, ‘এধরনের পরিস্থিতির আশায়ই আছেন বিমান কর্তৃপক্ষ। যাতে যাত্রী সংকটের কথা বলে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে একমাত্র আকাশ পরিসেবাটি বন্ধ করে দেয়া যায়’।
বরিশাল সেক্টরে অবিলম্বে নিয়মিত বিমান ফ্লাইট চালু সহ যাত্রী বান্ধব সময়সূচির দাবিতে ইতোপূর্বে ‘বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষন কমিটি’র পক্ষ থেকে মানববন্ধন সহ স্মারকলিপি পেস করা হলেও বিমান কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম রাজন। ২৩ অক্টোবর থেকে নতুন সময়সূচী প্রসঙ্গে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বরিশাল সেক্টরের যাত্রীদের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই বিমান কতৃপক্ষ খামখেয়ালীপূর্ণ ভাবে এমন সময়সূচী প্রবর্তন করতে যাচ্ছে, যা মোটেই যাত্রী বান্ধব নয়’। তিনি ‘শীতকালীণ সময়সূচীতে ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং বরিশাল থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় ফ্লাইট তফসিল পূণঃ নির্ধারণের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ও শনিবার বিকেলেও ফ্লাইট পরিচালনার দাবি’ জানান। ‘অন্যথায় এ লক্ষ্যে বৃহত্বর আন্দোলনের হুশিয়ারী’ উচ্চারন করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর বিক্রয় বিপনন পরিদপ্তরের পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘উড়জাহাজ সংকটের কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছেনা। কবে নাগাদ জাহাজ সংকট কাটবে এবং অভ্যন্তীণ সেক্টরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে’, সে প্রসঙ্গেও তিনি কিছু বলতে পারেন নি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ^াস বরিশাল বিমান বন্দর ও রাষ্ট্রীয় বিমান ফ্লাইট উদ্বোধনের পর থেকে নানা টালবাহানা ও খোড়া যুক্তিতে কয়েক দফায় ফ্লাইট বন্ধের পরে ২০২১-এর ২৬ মার্চ মহান স্বাধিনতা দিবসের সূবর্ণ জয়ন্তিতে বরিশাল সেক্টরে নিয়মিত ফ্লাইট চালু করে বিমান। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর খোড়া যুক্তি দেখিয়ে ২০২২-এর সেপ্টেম্বর থেকে এ সেক্টরে ফ্লাইট সংখ্যা সপ্তাহে ৩দিনে হৃাস করা হলেও ধারন ক্ষমতার ৭০-৮৫% যাত্রী হবার পরেও ফ্লাইট সংখ্যা আর বৃদ্ধি করা হয়নি।
উপরন্তু গত ২৫ আগষ্ট থেকে বরিশাল সেক্টরে বিমান ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ করে পুনরায় ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৩টির স্থলে সপ্তাহে ২টি ফ্লাইট চালু করা হয়। তবে আসন্ন শীতকালীণ সময়সূচিতে তা সুবিধার পরিবর্তে আরো বিড়ম্বনা তৈরি করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে যাত্রীদের তরফ থেকে।