
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের সরকারি সিদ্ধান্তকে অতিবেগবান ও জনআকাঙ্ক্ষাবিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার আজকের ভাষণে দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনের পথ খোলার বদলে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হলো।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা বারবার বলেছি একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করলে প্রশাসনিক জটিলতা ও রাজনৈতিক অবিশ্বাস তৈরি হবে। আটটি রাজনৈতিক দল নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছিল, যাতে ভোটাররা স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর সেই আশঙ্কাই সত্য হলো।
তিনি আরও যোগ করেন, যে উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের মতামত নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল, সেটি প্রশংসনীয়। কিন্তু একই দিনে দুইটি বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন বাস্তবে ভোটের স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ উভয়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জনগণের মূল চাওয়া একটি নিরপেক্ষ পরিবেশে গণভোট আয়োজনের নিশ্চয়তা তা স্পষ্ট করেননি। বরং প্রশাসনিক সুবিধার যুক্তি দেখিয়ে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করা হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশের বিরোধী রাজনীতির মধ্যে যে আস্থা গড়ে উঠছিল, তা এখন আবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
গোলাম পরওয়ার জানান, বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আলোচনার পর জামায়াত তাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানাবে।
তিনি বলেন, আমরা এখনো বিশ্বাস করি, সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনো পক্ষের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
এর আগে দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য এই গণভোটে চারটি বিষয়ে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে মতামত জানাবেন।
তিনি বলেন, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে সংস্কারের গতি ব্যাহত হবে না, বরং খরচ কমবে এবং পুরো প্রক্রিয়া উৎসবমুখর হবে।
তিনি আরও জানান, এই উদ্দেশ্যে শিগগিরই প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতসহ কয়েকটি দল এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও সরকার এই পদক্ষেপকে “দ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নের রোডম্যাপ” হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে বড় চ্যালেঞ্জ এবং ফলাফল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
একজন রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন, গণভোটের প্রশ্নটি চারটি সংস্কার একত্রে অন্তর্ভুক্ত করায় ভোটারদের মনোভাব সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে কিনা, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হলেও এর প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী পক্ষের আপত্তি স্পষ্ট করেছে যে, গণভোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ঐকমত্য এখনো অনুপস্থিত। জামায়াতের মতো দলগুলো যদি এই প্রক্রিয়ায় আস্থা না পায়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রত্যাশিত “সম্মিলিত সংস্কার” প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে উঠতে পারে।