
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা আদালত : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই আদেশ দেন।
এ সময় ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনও ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর মামলার প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের যুক্তিতর্ক ও সমাপনী বক্তব্য শেষ করেছিলেন। সেদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রসিকিউশন পক্ষে মামলার সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় আসামিপক্ষের স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
টানা তিনদিনের যুক্তি উপস্থাপনের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী নিজ মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে খালাসের আবেদন করেন। এছাড়া সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়েও যুক্তি খণ্ডন করেন মো. আমির হোসেন। বিশেষভাবে রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বিবেচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের দেওয়া সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন।
এছাড়া আইনজীবী উল্লেখ করেন, মামলার রাজসাক্ষী মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রাখার মাধ্যমে বাঁচতে চাইছেন। মাহমুদুর রহমান ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেননি বলেও জবানবন্দি দিয়েছেন, তবে তার সাক্ষ্য মামলার প্রভাব ফেলবে না। পরে রাজসাক্ষী মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, “জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত অপরাধের বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ একই দিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেন। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করা হয়।
মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র মোট ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২,০১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪,০০৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২,৭২৪ পৃষ্ঠা অন্তর্ভুক্ত।