
ক্রাইমট্রেস রিপোর্টঃ ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার দোসর আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি গাজী সামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতার সঙ্গে ইউএনও মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন গোপন বৈঠক করেছেন।ওই বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামীলীগকে পুর্নবাসন করা ইউএনওকে দ্রুত অপসারণের দাবী জানিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
জানাগেছে, এ বছর ১৩ মে মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই তিনি আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন এমন অভিযোগ উপজেলা বিএনপি নেতাদের। এ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ করেনি।
গত ৬ জুন তিনি আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি গাজী সামসুল হক ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মতিয়ার রহমানের সহচর বশির মৃধাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে চৌরাস্তায় সকাল-সন্ধ্যা হোটেলে ভিআইপি কক্ষে গোপন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়াসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ভাইরাল হয়।
এ ছবি এখন আমতলীতে টপ অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে। এছাড়া তিনি আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম মৃধার ছেলে সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপ্লবের সঙ্গে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। তার এমন কর্মকান্ডে বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগ ও ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার দোসরদের সঙ্গে ইউএনও গোপন বৈঠক করায় তিনি ফ্যাসিষ্টদের লালন করছেন। দ্রুত তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী তাদের।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখাগেছে, সকাল সন্ধ্যা হোটেলের ভিআইপি কক্ষে ইউএনও মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁনের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি গাজী সামসুল হক, বশির মৃধা, রাসেল ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এসআই নুরুজ্জামানসহ সাত জন খাওয়া দাওয়া করছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায় ইউএনও ও তার পরিবার ও আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পরিবারের ছবি।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানাগেছে, হোটেলের ভিআইপি কক্ষে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক শেষে তারা খাবার খেয়ে চলে যান। ওই বৈঠকে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ওই সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ইউএনও মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁনকে প্রায়ই আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে দেখা যায়। তারা আরো বলেন, একটি ছবিতে আওয়ামীলীগের এক নেতার সঙ্গে বৈঠক শেষে খাওয়া দাওয়া করতে দেখলাম।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার আমির মাওলানা মোঃ ইলিয়াস হোসাইন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, নিষিদ্ধ দল আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বৈঠক বে-মানান ও গর্হিত কাজ। তারা আরো বলেন, একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে এমন কাজে তিনি তার গ্রহন যোগ্যতা হারিয়েছেন। দ্রুত তাকে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদ থেকে অব্যহতি দেয়ার দাবী জানান তারা।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সৈয়দ আসাদুজ্জামান কাওসার বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আওয়ামী দোসরদের লালন-পালন করছেন। গোপনে আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, খাওয়া দাওয়া ও প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। মনে হয় ইউএনও আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ পুর্নবাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপ্লবের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। তাকে নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, এভাবে আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও খাওয়া দাওয়া করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ রায়হান কাওছার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।